আগামীকাল, শনিবার, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক বছর পূর্তি। এই দিনটি উপলক্ষে নবান্ন বা কালীঘাটে যে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে, তাতে অনুমতি দিল না প্রশাসন। কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই দুটি স্থানে কোনো ধরনের সমাবেশ বা অভিযান করা যাবে না। যদি কেউ আইন অমান্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য বিকল্প দুটি স্থানের প্রস্তাবও দিয়েছে পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের জন্য যে দুটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ড এবং অন্যটি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ। এই দুই স্থানে আইন মেনে এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি করা যাবে বলে জানানো হয়েছে। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য আবেদন করতে হবে এবং কোথা থেকে কতজন আসবেন, তা আগে জানাতে হবে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কালীঘাট অভিযানেরও কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে পুলিশ এটাও স্পষ্ট করেছে যে, যদি কেউ আইন ভাঙে, তবে তাদের শনাক্ত করতে সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহার করা হবে।
নবান্ন এবং কালীঘাট কেন ‘না’?
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, নবান্ন হলো রাজ্য সরকারের প্রধান কার্যালয়, যেখানে সব সময় উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-এর ১৬৩ ধারা (আগের ১৪৪ ধারা) এই এলাকায় সবসময় কার্যকর থাকে। তাই নবান্ন এলাকায় কোনো মিছিল বা জনসমাবেশ নিষিদ্ধ। একইভাবে, কালীঘাটও একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা, যেখানে যেকোনো ধরনের বড় জমায়েত আইন-শৃঙ্খলার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
অনুমতি না নিয়েই কর্মসূচি?
শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন আরজি করের নির্যাতিতার মা-বাবা, এবং এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আয়োজকরা এখনো পর্যন্ত কোনো অনুমতির জন্য আবেদন করেননি। সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যম থেকে এই কর্মসূচির বিষয়ে জানতে পেরে প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত বছরও একই ধরনের একটি নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল, যা ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ এর পক্ষ থেকে আয়োজিত হয়েছিল এবং বিজেপি তার সমর্থন জানিয়েছিল।
আদালতের রায় এবং পুলিশের যুক্তি
নবান্ন অভিযান ঠেকানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত তার রায়ে বলেছিল, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা প্রত্যেকের সাংবিধানিক অধিকার, তবে এর আড়ালে কোনো হিংসা বা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা চলবে না। প্রয়োজন হলে রাজ্য প্রশাসন বিধিনিষেধ জারি করতে পারে। এই রায়ের উপর ভিত্তি করেই প্রশাসন এখন কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে।