সম্প্রতি নবান্ন অভিযানের সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং পুলিশকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল কলকাতা পুলিশের কর্মীদের স্ত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তারা একযোগে শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি লাগাতার অপমান ও গালিগালাজের প্রতিবাদ জানান।
পুলিশকর্মীর স্ত্রী সালমা সুলতানা বলেন, “গত এক বছর ধরে পুলিশকর্মীদের ওপর অত্যাচার চলছে। খারাপ ভাষায় অপমান করা হচ্ছে, আমরা তা সহ্য করেছি, কিন্তু এখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিরোধী দলনেতা নবান্ন অভিযানে যেভাবে পুলিশকে বাজে ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশকর্মীকে প্রাণে মারার চেষ্টা হয়েছে এবং আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্বামী এবং ভাইরা রাস্তায় ডিউটি করছেন, অথচ তাদের মান-সম্মান রক্ষা করা হচ্ছে না।”
গত সপ্তাহে নবান্ন অভিযানের সময় শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে আক্রমণ করে বলেন, “মমতাকে প্রাক্তন করব, চোর ভাইপোকে জেলে ঢোকাব, আর মনোজ ভার্মাকে যেখানে ঢোকানোর সেখানে ঢোকাব।” ওইদিন পুলিশের সামনে চুড়ি, শাঁখা ও পলা তুলে ধরে বিক্ষোভও হয়, যা পুলিশকর্মীদের পরিবারকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।
এই অভিযানে পুলিশকর্মীদের উপর শারীরিক হামলাও হয়। একজন এএসআই, একজন কনস্টেবল এবং একজন হোমগার্ডসহ মোট পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত এএসআই জগবন্ধু সাহু এবং কনস্টেবল নিমাই মণ্ডল বর্তমানে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের পরিবার দাবি করে, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা এবং তাদের উপর শারীরিক আক্রমণ রুখতে অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাদের অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন, যা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। একজন সাংবাদিক তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গ তুললে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং উপস্থিতদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
এই ঘটনা আবারও রাজনৈতিক আন্দোলন এবং পুলিশের ভূমিকার মধ্যেকার সংঘাতকে সামনে এনেছে। পুলিশকর্মীদের পরিবারের এই প্রতিবাদ প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক আক্রমণ এখন শুধু পেশাগত গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তাদের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রভাব ফেলছে।