শনিবার সকালে হঠাৎ হড়পা বানে ভুটান সীমান্তবর্তী জয়বীরপাড়া, ঢেকলাপাড়া, বান্দাপানি চা বাগান এবং কালাপানি বস্তির প্রায় ২০ হাজার মানুষ সারাদিন ধরে কার্যত বন্দি হয়ে রইলেন। মরা নদীর প্রবল জলস্রোত পারাপার সম্পূর্ণ অসম্ভব করে তোলায় এই এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জরুরি কাজ, চিকিৎসা পরিষেবা বা অন্যান্য প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।
এদিন সকাল থেকে ডিমডিমা, ধুমচিখোলা এবং রেতি নদীতে আকস্মিকভাবে জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, এই নদীগুলোতে যাতায়াতের জন্য কোনো পাকা সেতু নেই। এর ফলে তিনটি চা বাগান ও একটি বস্তির হাজার হাজার মানুষ মূল জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, যেন এক একটি দ্বীপের বাসিন্দা।
বান্দাপানি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা টেম্পু ওরাওঁ একটি রাখি বন্ধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বীরপাড়ায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি ডিমডিমা নদী পার হতে না পেরে মাঝপথ থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন। শুধু ডিমডিমা নয়, বান্দাপানি চা বাগানের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুমচিখোলা নদীতেও কোনো স্থায়ী সেতু নেই। গত বছর নদীর বুকে একটি ‘কজওয়ে’ তৈরি করা হলেও হড়পা বানে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং এবছরের বানও সেটির ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়িয়েছে। এর ফলে স্থানীয় শ্রমিকরা কাজে যেতে চরম সমস্যায় পড়েন।
একইভাবে, ভুটান সীমান্ত ঘেঁষা কালাপানি বস্তির বাসিন্দারাও রেতি নদী পার হতে পারেননি, কারণ সেখানেও কোনো সেতু নেই। বানারহাটের দিকে যাওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। রেতি ফরেস্টের মধ্য দিয়ে কোনোভাবে জয়বীরপাড়া পর্যন্ত পৌঁছালেও ডিমডিমা নদী পার হওয়া সম্ভব না হওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।
এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এই নদীগুলোতে দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হোক। স্থানীয় সাংসদ জন বারলা ডিমডিমা নদীতে সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু এখনো কোনো কাজ শুরু হয়নি বলে অভিযোগ। তবে মাদারিহাটের বিধায়ক জয়প্রকাশ টোপ্পো জানিয়েছেন, পূর্ত দফতর ডিমডিমা নদীতে সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা করেছে এবং দ্রুত কাজ শুরু হবে। কিন্তু সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ভুটান সীমান্তের হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত থাকবে।