দ্বারকেশ্বর নদের গতিপথ পরিবর্তন! কৃষকদের করুণ দশা, মূলে বিরাট কোন ‘চক্র?’

অপরিকল্পিতভাবে নদীখাত থেকে বালি উত্তোলনের ফলে বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর নদের গতিপথ বদলে গেছে, যার ফলে নদীর পাড়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। ওন্দা ব্লকের নিকুঞ্জপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর কলোনি এলাকার কৃষকদের একরের পর একর কৃষিজমি এখন নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ কৃষকরা।

বদলে যাওয়া জলস্রোত:
একসময় দ্বারকেশ্বর নদের মূল স্রোত বইত শ্রীরামপুর কলোনির উল্টো পাড় দিয়ে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অবৈধ এবং অপরিকল্পিত বালি উত্তোলনের কারণে নদীর মূল স্রোত দিক পরিবর্তন করে এখন কলোনির পাড় ঘেঁষে বইছে। এর ফলে তীব্র জলস্রোতের আঘাতে প্রতিদিন নদীর পাড় ভেঙে পড়ছে, এবং কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

কৃষকদের করুণ দশা:
এই ভাঙনের ফলে শ্রীরামপুর কলোনি এলাকার প্রায় ৩০০ বিঘা তিন ফসলি জমি ইতিমধ্যেই নদীর পেটে চলে গেছে। বহু কৃষকের চাষের জমি হারিয়ে তাদের মাথায় হাত পড়েছে। যারা একসময় তিন ফসল ফলিয়ে জীবনধারণ করতেন, এখন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। স্থানীয় কৃষকরা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি।

প্রশাসনের গাফিলতি ও রাজনৈতিক চাপানউতোর:
ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নদীর পাড় বাঁধানোর জন্য আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু এই আশ্বাস যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন কৃষকরা। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনার জন্য সরাসরি রাজ্যের শাসকদল ও প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ, অবৈধ বালি উত্তোলন চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে শুধু বাঁকুড়াই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অবৈধ বালি উত্তোলনের কারণে একই ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনকি বীরভূমের তিলপাড়া ব্যারেজের বেহাল দশার পেছনেও এই বালি উত্তোলনকে দায়ী করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। অবিলম্বে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আরও বহু কৃষিজমি এবং ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy