দেশের শিক্ষা পরিকাঠামোর এক ভয়ংকর চিত্র সামনে আনল কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। একটি সদ্য প্রকাশিত তথ্যে জানা যাচ্ছে, দেশজুড়ে প্রায় এক লক্ষেরও বেশি স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন করে। আর সেই স্কুলগুলিতে পাঠরত মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৩ লক্ষের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। শিক্ষাবিদ এবং অভিভাবকদের মধ্যে যা ইতিমধ্যেই তীব্র উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট ১ লক্ষ ০৪ হাজার ১২৫টি স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ১ জন। অন্যদিকে, এই স্কুলগুলিতে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৬৯ জন। অর্থাৎ, প্রতি স্কুলে শিক্ষক পিছু পড়ুয়ার গড় সংখ্যা এসে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩৪ জন।
আইনের চোখে অপরাধ?
এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন (RTI) অনুযায়ী নির্ধারিত আদর্শ অনুপাতের সম্পূর্ণ বিরোধী। আইন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্তরে একজন শিক্ষকের অধীনে সর্বোচ্চ ৩০ জন পড়ুয়া থাকা উচিত এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে এই সংখ্যাটা ৩৫ জন। কিন্তু দেশের লক্ষাধিক স্কুলেই এই আদর্শ অনুপাতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাজ চালাচ্ছেন একজন মাত্র শিক্ষক। প্রশ্ন উঠছে, এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা কীভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব?
কোন রাজ্যে কতটা করুণ অবস্থা?
মাত্র এক জন শিক্ষক রয়েছেন, এমন স্কুলের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণী রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ। সেখানে এই ধরনের মোট ১২ হাজার ৯১২টি স্কুল রয়েছে। এর ঠিক পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর প্রদেশ, যেখানে সংখ্যাটি ৯ হাজারের অধিক। তৃতীয় স্থানে ঝাড়খণ্ড (৯,১৭২) এবং চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র (৮,১৫২) ও কর্ণাটক (৭,৩৪৯)।
তবে এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গও পিছিয়ে নেই। তথ্যানুযায়ী, বাংলায় এমন স্কুলের সংখ্যা ৬ হাজার ৮৪২টি, যা বেশ কিছু রাজ্যের তুলনায় কম হলেও শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরছে। তুলনামূলকভাবে বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যের তুলনায় বাংলার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম এমন স্কুল রয়েছে আন্দামান ও নিকোবরে (৪টি) এবং দিল্লিতে (৯টি)।
সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র কী ভাবছে?
পরিস্থিতির ভয়াবহতা মেনে নিয়েই এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে কেন্দ্রীয় আধিকারিক জানিয়েছেন, “শিক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকার নিরন্তর পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা জানি, শিক্ষকশূন্যতা পড়ুয়াদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।” তিনি আরও জানান, আপাতত যে সকল সরকারি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা নগণ্য, সেই স্কুলগুলির শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণের জন্য এই সকল স্কুলগুলিতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যা কেবলমাত্র শিক্ষক নিয়োগের নয়, সামগ্রিক শিক্ষা পরিকল্পনা এবং পরিকাঠামোগত দুর্বলতারও ফল। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বড়সড় বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।