দুর্গাপূজার অনুদান, বিতর্ক সত্ত্বেও প্রায় ৯০০% বৃদ্ধি, রাজ্য সরকারের খরচ বাড়ছে ১০০ কোটির বেশি

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা এখন ইউনেস্কোর ‘হেরিটেজ’ তকমা পেলেও, রাজ্য সরকারের দেওয়া অনুদানকে ঘিরে বিতর্ক থামছে না। ২০১৮ সালে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে যে অনুদান পর্ব শুরু হয়েছিল, তা বর্তমানে লাফিয়ে বেড়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় পৌঁছেছে, যা প্রায় ৯০০ শতাংশ বৃদ্ধি। এর ফলে অনুদানে রাজ্য সরকারের খরচ এক বছরের ব্যবধানেই অন্তত ১০০ কোটি টাকা বেড়েছে।

ঐতিহ্যগতভাবে, দুর্গাপূজার খরচ মূলত চাঁদা তুলেই মেটাতেন পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুদান দেওয়ার এই রীতি চালু করেন, যা শুরু থেকেই প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। প্রশ্ন ওঠে, ধর্মীয় উৎসবের জন্য সরকার কেন জনগণের টাকা খরচ করবে? তবে সেইসব তর্ক-বিতর্ক পিছনে রেখেই প্রতি বছর অনুদানের অঙ্ক বেড়ে চলেছে।

অনুদানের অঙ্কের ঊর্ধ্বগতি:
২০১৮ সাল: অনুদান শুরু, প্রতিটি ক্লাবকে ১০,০০০ টাকা। ক্লাবের সংখ্যা ২৮,০০০।

২০১৯ সাল: অনুদান ও ক্লাবের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রায় ৪০,০০০ ক্লাব।

২০২৫ সাল (বর্তমান): প্রতিটি ক্লাবকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনুদান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সারা রাজ্যে প্রায় ৪৫,০০০ ক্লাব পুজো করে। যদি ক্লাবের সংখ্যা ৪৩ হাজারও ধরা হয় (ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের হিসেব অনুযায়ী), তাহলে এবার অনুদানে রাজ্যের মোট খরচ হচ্ছে ৪৭৩ কোটি টাকা। যদি ৪৫,০০০ ক্লাবের হিসেব ধরা হয়, তাহলে এই খরচ আরও বেশি হবে।

গত বছর এই খরচ ছিল ৩৬৫.৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ এই বছর অন্তত ১০০ কোটি টাকা খরচ বাড়ছে।

বিদ্যুৎ বিলে ছাড় ও অন্যান্য সুবিধা:
কেবল অনুদান বৃদ্ধিই নয়, বিদ্যুৎ বিলেও ছাড়ের পরিমাণ বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। এবার ৮০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে বেশি। এই সুবিধাগুলি পুজো কমিটিগুলির জন্য নিঃসন্দেহে বড় স্বস্তি এনে দেবে।

বিতর্ক ও সমালোচনার আবহে অনুদান বৃদ্ধি:
একদিকে যখন রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে, তখন দুর্গাপূজার অনুদানে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, এই টাকা কি জনকল্যাণমূলক অন্য কোনো প্রকল্পে ব্যবহার করা যেত না? অন্যদিকে, শাসক দলের দাবি, এই অনুদান রাজ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে এবং পুজোকে কেন্দ্র করে যে বিশাল অর্থনীতি গড়ে ওঠে, তাকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে।

যুক্তি-পাল্টা যুক্তির এই বিতর্কের মধ্যেই, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, দুর্গাপূজার অনুদান আগামী দিনেও রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy