দিল্লির বিধানসভায় ‘ফাঁসি ঘর’ বিতর্ক, বিজেপি-আপ বিধায়কদের তুমুল বচসা

দিল্লির বিধানসভায় তথাকথিত ‘ফাঁসি ঘর’ নিয়ে বিজেপি এবং আম আদমি পার্টির (আপ) বিধায়কদের মধ্যে বুধবার তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। বিজেপি বিধায়করা দাবি করেন যে, আপ সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, কারণ এই কক্ষটি আসলে একটি ‘টিফিন রুম’ ছিল। অন্যদিকে, আপ বিধায়করা তাদের দাবির পক্ষে সওয়াল করেছেন। এই বিতর্কের জেরে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠলে স্পিকার বিজেন্দ্র গুপ্তা বিরোধী দলনেতা আতিশী-সহ বেশ কয়েকজন আপ বিধায়ককে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে দেন।

স্পিকার বিজেন্দ্র গুপ্তা ১৯১২ সালের বিধানসভা কমপ্লেক্সের একটি মানচিত্র প্রদর্শন করে বলেন যে, এমন কোনো প্রমাণ নেই যা থেকে বোঝা যায় যে এই কক্ষটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০২২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই কাঠামোটিকে ‘ফাঁসি ঘর’ হিসেবে সংস্কার করে উদ্বোধন করেন, কিন্তু এটি আসলে একটি ‘টিফিন রুম’ ছিল।

বিজেপি বিধায়ক ও মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা আপ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, “কেজরিওয়াল মেধাবী ছিলেন। তিনি জানতেন কীভাবে মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে হয়। তাঁর বড় শার্ট, মাফলার, ছোট গাড়ি, দুই টাকার কলম, এমনকি তাঁর কাশি, সবকিছুরই একটা উদ্দেশ্য ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তিনি ভগত সিংয়ের উত্তরাধিকারী।” রেখা গুপ্তা এই তথাকথিত ‘ফাঁসি ঘর’ পরিদর্শন করে দাবি করেছেন যে, সেখানে ফাঁসি দেওয়া সম্ভব ছিল না। তিনি এই বিষয়ে তদন্ত এবং সংস্কারের জন্য ব্যয় হওয়া ১ কোটি টাকা পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।

তবে আপ বিধায়ক সঞ্জীব ঝাঁ পাল্টা যুক্তি দেন যে, ব্রিটিশরা অনেক ফাঁসি ঘর তৈরি করলেও সব নথিবদ্ধ হয়নি। তিনি বলেন, “এই ‘ফাঁসি ঘর’ ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল। অনেক ইতিহাসবিদ বলেছেন যে সমস্ত ফাঁসির রেকর্ড রাখা হয়নি।” তিনি আরও বলেন, ১৯১২ সালের মানচিত্র অনুযায়ী, প্রাঙ্গণের একমাত্র দ্বিতল কাঠামোটি ‘ফাঁসি ঘর’ হিসেবেই চিহ্নিত ছিল। ঝাঁ সরকারকে যথাযথ তদন্তের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার কাছে স্থানটি হস্তান্তরের আহ্বান জানান।

এদিকে, বিজেপি মন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা বলেন, “বাবাসাহেব আম্বেদকর-সহ স্বাধীনতা আন্দোলনের যুগের কেউই এই স্থানের এই ধরনের ব্যবহারের বিরোধিতা করেননি।” তিনি বলেন, ঘরের গর্তটি মাত্র ২.৫ ফুট চওড়া ছিল এবং ব্যবহৃত দড়িটি একটি পরিষেবা লিফটের জন্য ছিল, যা ফাঁসির জন্য ব্যবহার করা যায় না। এই ঘটনা দিল্লির রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy