দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কূটনৈতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হল দিল্লিতে। সোমবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত দোভাল সাক্ষাৎ করলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে। এই বৈঠকের কেন্দ্রে ছিল দুই দেশের নিরাপত্তা কৌশল আলোচনা, তবে নেপথ্যে ছিল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ (Extradition) সংকট।
বৈঠকের পটভূমি: শেখ হাসিনা সংকট
-
নির্বাসন: বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন-পরবর্তী অস্থিরতার সময় শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন এবং বর্তমানে তিনি এক বছরের বেশি সময় ধরে ‘স্বেচ্ছা নির্বাসনে’ রয়েছেন।
-
প্রত্যর্পণের দাবি: ঢাকা সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে তাঁকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে।
-
দিল্লির অবস্থান: এই পরিস্থিতিতে দিল্লির অবস্থান অত্যন্ত সতর্ক। ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে—তারা “সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।”
কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (CSC)
এই বৈঠকটি মূলত কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (CSC) ৭ম NSA মিটিং-এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা ও সেশেলস আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করতে কাজ করে।
-
আলোচনার বিষয়: বৈঠকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও নজরদারি, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ, পাচার রোধ এবং সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ২০২৬ সালের রোডম্যাপ ও অ্যাকশন প্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়।
-
আমন্ত্রণ: খলিলুর রহমান অজিত দোভালকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ, তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা এবং ঢাকা সরকারের বারবার প্রত্যর্পণের দাবি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অস্বস্তির ছায়া ফেলেছে।
-
ভারতের কৌশল: ভারত কোনও পক্ষ না নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক কূটনৈতিক অবস্থান নিয়েছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণ বজায় রাখা।
-
বাংলাদেশের চাপ: হাসিনার অনুপস্থিতি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে জটিল করে তোলায় বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দ্রুত ফেরত পাঠানোর জন্য চাপ বাড়াচ্ছে।
কূটনৈতিক তাৎপর্য:
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকটি দেখিয়ে দিল যে ভারত ও বাংলাদেশ যোগাযোগের দরজা খোলা রেখেছে। নিরাপত্তা সহযোগিতার পাশাপাশি প্রত্যর্পণ ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও উভয় পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করেনি। ভারত এই জটিল পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক আইন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছে। এই সংলাপই প্রমাণ করে যে নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারত-বাংলাদেশ এখনও একই পথে হাঁটছে।