দিলীপের ‘ম্যায় হুঁ না’ স্লোগানে বঙ্গ বিজেপিতে নয়া জল্পনা, অস্বস্তিতে বঙ্গ বিজেপি?

২১ জুলাইয়ের ঠিক তিন দিন আগে দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সম্ভাব্য উপস্থিতি এবং তাঁর সাম্প্রতিক ‘ম্যায় হুঁ না’ (আমি আছি) মন্তব্য বঙ্গ বিজেপির অন্দরে নতুন করে জল্পনা সৃষ্টি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়ে সম্প্রতি দলের একাংশের কাছে কিছুটা একঘরে হয়ে পড়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছিল, কিন্তু দিলীপ ঘোষ যে এখনও ‘ময়দানে’ স্বমেজাজে রয়েছেন, তা তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে স্পষ্ট।

মঙ্গলবার দিলীপ ঘোষের এই ‘ম্যায় হুঁ না’ মন্তব্য সরাসরি শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারদের দিকে ইঙ্গিত করছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। বঙ্গ বিজেপিতে শমীক ভট্টাচার্যের নতুন রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরও দিলীপের এই পুরনো মেজাজ দলের ঐক্যবদ্ধ ছবি প্রদর্শনে কিছুটা হলেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলে অনেকে মনে করছেন। নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য যতই দলের ঐক্যবদ্ধ ছবি দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, দিলীপ আছেন দিলীপেই!

আগামী শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা। সেই সভায় তিনি যাবেন বলে আগাম জানিয়ে রেখেছেন দিলীপ। তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, সভায় চেয়ার না জুটলে কর্মীদের সঙ্গেই বসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন। প্রধানমন্ত্রীর যে ট্যুর প্রোগ্রাম সামনে এসেছে, তাতে অন্ডাল বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথেই তাঁর দুর্গাপুরে সভাস্থলে যাওয়ার কথা। আগে ঠিক ছিল, এয়ারপোর্ট থেকে তিনি চপারে দুর্গাপুরে যাবেন, কিন্তু পরিবর্তিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুর্গাপুরে মোদীর রোড-শো করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সভার আগে দলের অন্দরে দিলীপের এই মন্তব্যে জল্পনা আরও বাড়ছে।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দিলীপ ঘোষ কারোও নাম না-করে বলেন, “আমি কারোও সার্টিফিকেট চাইনি। কাউকে ওড়াতেও চাই না। আমার আমলেই এঁরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের নিয়ে পার্টি কাজ করে এগিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, দল তাহলে এখন এগোচ্ছে না কেন? সেই উত্তর খুঁজতে হবে।” দিলীপের সংযোজন, “দিলীপ ঘোষ তৈরি রয়েছে। রাস্তায় রয়েছে। কর্মীদের মাঝে রয়েছে। যে কাজ আমায় দেওয়া হয়েছিল, তা আমি করেছি। এখনও সুস্থ-সবল রয়েছি। দল যেভাবে ব্যবহার করবে, সে রকম ভাবেই কাজ করব।” এর পরেই তাঁর সেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য – “ম্যায় হুঁ না।”

দলে দিলীপ-ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এই দিলীপ কিন্তু একেবারে পুরনো দিলীপ। যাঁর ধ্যান-জ্ঞানই হলো দল। মাঝের পর্বে সামান্য দূরত্ব বাড়লেও শমীক সেই দূরত্ব মেটাতে চেষ্টা করেছেন। দিল্লিতে গিয়ে ‘চেয়ার না পাওয়া’ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করা দিলীপ এবার যেন ফের প্রথম সারিতে ফিরছেন।

একুশে জুলাইয়ের প্রসঙ্গ উঠলে দিলীপ তা এড়িয়ে না গিয়ে বলেন, “একুশে জুলাই নিয়ে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ তো প্রবল। সেটাই স্বাভাবিক। গুঞ্জন তো ছিলই। প্রত্যেকবারই থাকে। ডিম-ভাতের উৎসব হয়। কিন্তু আমি দেখলাম, এবার আমাদের পার্টির লোকেদেরও খুবই উৎসাহ ছিল (আমি কী করব, তা নিয়ে)। উৎসাহ তাঁদের মধ্যে ছিল, যাঁরা ওখানে ডিম ভাত খেয়ে এসেছেন। আমাদের বিজেপির (আদি বিজেপি) লোকেদের কোনো সমস্যা নেই এই নিয়ে।”

দিলীপ ঘোষের এই অবস্থান এবং তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যগুলি আগামী দিনে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy