মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেদিনীপুর সফরকে কেন্দ্র করে রাতারাতি শহরের চেহারা বদলে গেল। দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, আবর্জনা আর অবহেলায় ঢেকে থাকা মোড়গুলি হঠাৎ করেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে হয়ে উঠেছে। শহরের এই রূপান্তর দেখে অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা এবং তাঁদের মুখে এখন একটাই কথা, “দিদি যদি মাসে একবার করে আসতেন, তাহলে সারা বছর শহরটা এমন থাকত!”
মঙ্গলবার ঘাটাল হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরে পৌঁছান এবং সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করেন। কিন্তু তাঁর সফরের খবর আসার পর থেকেই শহর জুড়ে সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়ে যায়। পুরসভা এবং জেলা প্রশাসন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাস্তাঘাট সংস্কার, ড্রেন পরিষ্কার, আবর্জনা সরানো এবং রঙ করার কাজে নেমে পড়ে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেমন চৌরঙ্গী, এলআইসি মোড়, বিদ্যাসাগর কলেজ চত্বর, এবং পুলিশ লাইন নতুন করে নীল-সাদা রঙে সেজে উঠেছে।
এক চায়ের দোকানদার বলেন, “এত পরিষ্কার শহর কত দিন পর দেখলাম! বিশ্বাস হচ্ছে না।” তাঁর পাশে বসে থাকা এক যুবক হেসে যোগ করেন, “করবে না মানে! দিদি আসছেন বলে কথা!” এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, শহরবাসীর মধ্যে এই পরিবর্তন কতটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
শহরের এই হঠাৎ পরিবর্তন মেদিনীপুরবাসীর মধ্যে একদিকে যেমন আনন্দ এনেছে, তেমনই আরেকদিকে আক্ষেপেরও জন্ম দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, “যদি দিদি মাসে একবার করে এলেন, তাহলে তো শহরটা সারাবছরই ঝকঝকে থাকবে! তাহলে আমরা কি তাঁর সফরের অপেক্ষায় বসে থাকব?” অনেকেরই প্রশ্ন, প্রশাসনের এই তৎপরতা কেন শুধু মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ই দেখা যায়? কেন নিয়মিতভাবে শহরের প্রতি এমন যত্ন নেওয়া হয় না?
এই প্রশ্নই এখন সর্বত্র আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরবাসীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সফর হোক বা না হোক, শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রশাসনকে নিয়মিত নজর দিতে হবে। তাহলেই একটি স্থায়ী ‘স্বচ্ছ শহর’ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।