সম্প্রতি সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়ে বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের পর থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবন এবং জনপ্রিয় টিভি শো ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ নিয়ে আলোচনা চলছে। এবার সেই আলোচনা নতুন মাত্রা পেল, যখন রচনা নিজেই তাঁর সাংসদ হিসেবে সংসদে অনুপস্থিতি এবং শো-এর প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিয়ে মুখ খুললেন।
ভোটের প্রচারের সময় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রচনাকে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছিল। তাঁর প্রচার কর্মসূচিতেও মহিলাদের ব্যাপক ভিড় দেখা গিয়েছিল, যা তাঁর জনপ্রিয়তারই প্রতিফলন। কিন্তু লোকসভার অধিবেশন চলাকালীন তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ শোটি বন্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ এটি বহু মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার সঙ্গে জড়িত।
সংসদে অনুপস্থিতি নিয়ে রচনার যুক্তি:
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা পুরোপুরিভাবে রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতিই তাঁদের পেশা, তাঁদের অবশ্যই পার্লামেন্টে যাওয়া উচিত। যতক্ষণ পার্লামেন্ট চলবে, ততক্ষণ তাদের যাওয়া উচিত, যদি না তাদের শারীরিক বা পারিবারিক কোনো অসুবিধা হয়।”
এর পরেই তিনি নিজের পেশার উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমি আমার নিজের উদাহরণ দিচ্ছি, কারণ আমি দিদি নম্বর ওয়ানের মতো একটা শো করি। এর পাশাপাশি আমার নিজস্ব ব্যবসাও আছে এবং আমি একজন রাজনীতিবিদ। তারপরেও আমাকে সবকিছু সামলাতে হচ্ছে। আমাকে শো-টাও চালাতে হবে। কারণ এটা এমন একটা শো, যেটা বন্ধ হয়ে গেলে হয়তো আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে। সেটা আমি হতে দিতে পারব না।”
সাংসদদের কম উপস্থিতির প্রসঙ্গ:
প্রসঙ্গত, ভারতের পার্লামেন্টে অনেক সাংসদেরই কম উপস্থিতির হার দেখা যায়। সেই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরেই রচনা এই মন্তব্য করেন। তাঁর বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, তিনি তাঁর পেশা এবং রাজনীতি – এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছেন। তবে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ এর মতো একটি শোয়ের জনপ্রিয়তা তাঁর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি মনে করেন এটি বন্ধ হলে জনরোষ তৈরি হতে পারে।
নির্বাচনের আগে থেকেই তাঁর অভিনয় জীবনের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে দলের প্রচার করা হয়েছিল। এখন সাংসদ হওয়ার পর তাঁর এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর মূল দায়িত্ব জনগণের জন্য কাজ করা এবং সংসদে উপস্থিত থেকে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করা। অন্যদিকে, তাঁর সমর্থকরা বলছেন যে, তিনি একজন সাংসদ হিসেবেও জনমানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন এবং তাঁর শো-এর মাধ্যমেও তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মহিলাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন।
সব মিলিয়ে, হুগলির নতুন সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে তিনি কীভাবে তাঁর দুটি ভূমিকা সমানভাবে পালন করেন, সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে সকলে।