রাজধানীতে শীতের আগমন মানেই ধোঁয়াশার চাদর ও বিষাক্ত বাতাস। এবছর তার ব্যতিক্রম হল না। দিল্লির বাতাসের গুণগত মান (Air Quality Index বা AQI) ‘খারাপ’ শ্রেণিতে অর্থাৎ ২১১-তে পৌঁছানোর পরই কড়া পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় দূষণবিরোধী সংস্থা “কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট” (CAQM)। মঙ্গলবার এই সংস্থা দিল্লি ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (NCR)-এ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (GRAP)-এর প্রথম ধাপ (Stage-I) কার্যকর করার ঘোষণা করেছে।
চলতি মরসুমে এই প্রথমবার GRAP কার্যকর করা হলো। কেন্দ্রের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (CPCB)-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের বাতাসে দূষণের মাত্রা আগামী কয়েক দিন ‘খারাপ’ বা তার কাছাকাছি স্তরেই বজায় থাকবে।
GRAP পর্যায়-I: কী কী বন্ধ ও কড়াকড়ি?
GRAP-এর প্রথম ধাপ (‘খারাপ’ বায়ু মান, AQI ২০১-৩০০) কার্যকর হওয়ার ফলে দিল্লি ও লাগোয়া রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, রাজস্থান ও পাঞ্জাবের প্রশাসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং স্থানীয় পৌর সংস্থাগুলিকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিতে হবে।
১. নির্মাণে কঠোরতা:
ধূলি দমন ব্যবস্থা (Dust Mitigation System) ছাড়া শ্রমনির্ভর নির্মাণ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
সব নির্মাণ সাইটে বাধ্যতামূলকভাবে জল ছিটানো এবং ধূলি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
২. শিল্প ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ:
দূষণকারী শিল্প ইউনিটগুলিতে কঠোর নজরদারি এবং সিএনজি (CNG) ব্যবহারকারী গণপরিবহন নিশ্চিত করার নির্দেশ।
ভারী যানবাহনের কালো ধোঁয়া নির্গমন নিয়মিত নিরীক্ষা করতে হবে।
দিল্লির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে ১০০% পাইপড প্রাকৃতিক গ্যাস (PNG) ব্যবহারে স্থানান্তর করতে হবে।
৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
যেকোনো আবর্জনা বা জৈব বর্জ্য পোড়ানো সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে।
CAQM সমস্ত সংস্থাকে “নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ ও কঠোর সতর্কতা” বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে বায়ু মান কোনোভাবেই ‘অতি খারাপ’ বা ‘ভয়াবহ’ স্তরে না পৌঁছায়।
নাগরিকদের জন্য সতর্কতা ও ভবিষ্যদ্বাণী
CAQM নাগরিকদেরও GRAP পর্যায়-I নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার এড়িয়ে গণপরিবহণ ব্যবহার করুন।
সন্ধ্যার সময় বাইরে শারীরিক পরিশ্রম বা ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
দূষণ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে ১৮০০-১৮০-১৭০৮ নম্বরে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও সতর্ক করেছেন। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টর নির্বাহী পরিচালক ড. অনুমিতা রায়চৌধুরী বলেন, “জিআরএপি একধরনের অস্থায়ী সমাধান মাত্র। যতক্ষণ না ফসলের বর্জ্য পোড়ানো (Stubble Burning) ও আন্তঃরাজ্য সমন্বয়ের সমস্যার সমাধান হয়, ততক্ষণ আমরা কেবল ধোঁয়াশার আগমন কিছুটা দেরি করছি।”
আইআইটিএমের পূর্বাভাস মডেল সতর্ক করেছে যে, আগামী সপ্তাহে শান্ত বাতাস ও পরিষ্কার আকাশের কারণে দূষণ আরও জমে থাকতে পারে। এর ফলে মাসের শেষে দিল্লির এয়ার ইনডেক্স ২৫০-এর ওপরে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ইতিহাস বলছে, দীপাবলির পরেই দিল্লির বায়ু মান দ্রুত অবনতি ঘটে এবং গত শীতে দিল্লি ৫০টিরও বেশি ‘ভয়াবহ’ দূষণ দিনের সাক্ষী ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কঠোর নীতি বাস্তবায়ন না হলে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবিকার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।