বিষাদের বিজয়া দশমী পেরিয়ে গেলেও, তার রেশ এখনও কাটেনি। আর এইবার দুর্গাপূজা (Durga Puja 2025) শুধু বাংলা বা দেশের অন্য প্রান্তে নয়, কাশ্মীরের শ্রীনগরেও এক নতুন ইতিহাস তৈরি করল। শ্রীনগরে বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাতৃবন্দনার আনন্দ ভাগ করে নিলেন স্থানীয় কাশ্মীরি জনগণ।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিগতভাবে সংবেদনশীল এলাকা এবং রাজধানী শ্রীনগরের ‘হৃদয়স্থল’ লাল চৌকের রাস্তায় গতকাল, ২ অক্টোবর, মহাদশমীর দিনে এই দৃশ্য ছিল চোখ ধাঁধানো। ঢাকের বাদ্যি, ঘুঙুরের ঝঙ্কার এবং ‘জয় মা দুর্গা’-র জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
দশক পর দশক পর এমন দৃশ্য কাশ্মীরের সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক অপূর্ব প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মিছিলে বাঙালি-কাশ্মীরি-বিদেশী: ‘একতার কাশ্মীর’ বার্তা
গতকাল মহাদশমীর দিন শ্রীনগরের বাঙালি সম্প্রদায়ের সদস্যরা শিব মন্দির থেকে দেবী দুর্গার মূর্তি নিয়ে বিসর্জন মিছিল শুরু করেন। এই মিছিল যখন লাল চৌকের প্রধান চৌরাস্তায় পৌঁছায়, তখন তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
সিঁদুর খেলা: মহিলারা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। লাল সিঁদুর মেখে একে অপরের কপালে তিলক পরিয়ে দেন।
কাশ্মীরিদের যোগদান: এই দৃশ্যে সামিল হন কাশ্মীরি মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরাও। তাঁরা বাঙালির সঙ্গে হাত মেলান এবং শুভেচ্ছা জানান, যা ‘একতার বাংলা, একতার কাশ্মীর’-এর বার্তা দেয়।
ভাইচারা ভাইরাল: এমনকি, মিছিলে অংশগ্রহণকারী এক বিদেশী পর্যটকের মুখে রং লাগানোর দৃশ্যও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘কাশ্মীরের ভাইচারা’ হ্যাশট্যাগে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
মিছিলে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের নাচ-গানে পুরো এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
শান্তি ফিরতেই নতুন ইতিহাস: বিচ্ছিন্নতাবাদী কেন্দ্র আজ উৎসবের আঙ্গিনা
শ্রীনগরে প্রায় ৫০০ বাঙালি পরিবার বাস করেন, যারা মূলত আইটি, ব্যবসা এবং শিক্ষা খাতে যুক্ত। ২০১৯ সালের পর কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসার পর এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মিছিলগুলো আরও বেশি স্বাভাবিক ও খোলামেলা হয়েছে।
একসময় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাল চৌক, আজ উৎসবের আঙ্গিনা হয়ে উঠেছে। গত বছর রামনবমীর মিছিলে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের যোগদানের মতোই, এবার দুর্গাপূজার বিসর্জনেও সেই একই সৌহার্দ্যের ছবি দেখা গেল।
পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক লাল চৌকে এই বহু প্রতীক্ষিত মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।