লোকসভার প্রধান হুইপ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরপরই তৃণমূলের অন্দরের কোন্দল প্রকাশ্যে নিয়ে এলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ এবং বিশিষ্ট আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে তিনি কার্যত দল এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাঠগড়ায় তুলেছেন।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমের সামনে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, দলে তাঁর দাম ফুরিয়েছে। তিনি বলেন, “যেকোনো ইস্যুতে আমি সবচেয়ে বেশি গলা ফাটিয়েছি। কিন্তু আজ আমি ব্রাত্য কেন?” তিনি সায়নী, মহুয়া, কীর্তি আজাদের মতো সাংসদদের নাম করে অভিযোগ করেন যে, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা করা নিয়ে কখনোই তাঁদের কিছু বলেন না।
অভিষেকের বিরুদ্ধে পরোক্ষ আক্রমণ:
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেছেন, “আমি বড়লোকের ছেলে নই। আমি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করিনি।” এই মন্তব্যে কল্যাণ যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরোক্ষভাবে বিঁধেছেন, তা বলাই বাহুল্য। তিনি আরও সরবে বলেছেন, দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়কে গত সাত বছরে তাঁর কোনো বক্তৃতা দেখা যায় না, অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে মমতার কোনো অভিযোগ নেই। যারা দল বিরোধী কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধেও মমতা কখনো গর্জে ওঠেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
‘স্বৈরাচার চলছে’ এবং দলীয় কোন্দল:
ক্ষুব্ধ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি সবচেয়ে বেশি গলা ফাটিয়েছি। ওয়াকফের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লড়েছি, কিন্তু আজ আমাকেই ছেঁটে ফেলা হলো।” তিনি আরও বলেন, সাংসদরা প্রত্যেকদিন নিয়মভঙ্গ করছেন, “কেউ নাটক করছে, কেউ থিয়েটার করছে আর দোষ হচ্ছে আমার।” অভিমানের সুরে তিনি বলেন, “এই বয়সেও যেভাবে চিৎকার করি, অল্পবয়সীরা পারবে না।” কিন্তু ‘ওরাই মমতার কাজের লোক, আমি নই’। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, এই ২৯ জন সাংসদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও দিনের পর দিন ধরে তৃণমূল নেত্রী চুপ করে বসে আছেন। কল্যাণ তাঁর আজকের বক্তব্যে পরিস্কার করে দিয়েছেন যে, তৃণমূলে মমতার ‘গুড বুকে’ না থাকলে হবে না, কারণ এই দলের মধ্যে ‘স্বৈরাচার’ চলছে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা এবং তাঁর একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য আবারও প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, তৃণমূলের ফুল দিয়ে সাজানো বাগানের ভেতরে আসল কাঁটা লুকিয়ে আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দলীয় কোন্দল বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যদি অচিরেই সমাধান না হয়, তবে আসন্ন নির্বাচনে এর প্রভাব তৃণমূলকে জোর ধাক্কা দিতে পারে। বিধানসভা ভোটের আগে বঙ্গ বিজেপিতেও বড়সড় রদবদলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যেখানে ৭টি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে বদল হতে পারে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।