মেঘালয়ের ‘হানিমুন মার্ডার’ কেস যখন দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ত্রিপুরার ধলাই জেলায় সামনে এল আরও এক চাঞ্চল্যকর এবং হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ড। ত্রিকোণ প্রেমের বলি হয়েছেন ২৮ বছর বয়সী যুবক সরিফুল ইসলাম, যার দেহ উদ্ধার হয়েছে একটি ট্রলিব্যাগের মধ্যে, যা রাখা ছিল এক আইসক্রিম ফ্রিজারে! এই মর্মান্তিক ঘটনা রাজ্যজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং আবারও সম্পর্কের জটিলতার ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরেছে।
নিখোঁজ ইলেক্ট্রিশিয়ান, ফ্রিজারে মিলল নিথর দেহ
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সরিফুল ইসলাম (২৮) আগরতলার ইন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান। তিনি আগরতলা স্মার্ট সিটি মিশন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরেই সরিফুলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, যা পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বুধবার, আগরতলা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ধলাই জেলার গণ্ডাছেড়া বাজার এলাকার একটি দোকানে থাকা আইসক্রিম ফ্রিজারের মধ্যে থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। এই আবিষ্কার এতটাই অপ্রত্যাশিত এবং নৃশংস যে তা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
ত্রিকোণ প্রেমই কি খুনের নেপথ্যে? মূল অভিযুক্ত চিকিৎসক!
পশ্চিম ত্রিপুরার পুলিশ আধিকারিক কিরণ কুমার কে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ত্রিকোণ প্রেমের জেরেই সরিফুলকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় দিবাকর সাহা নামে এক চিকিৎসককে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, দিবাকরের এক আত্মীয় মহিলার সঙ্গে সরিফুলের সম্পর্ক ছিল, যা এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় চিকিৎসক দিবাকর, তার বাবা-মা এবং আরও তিনজন মহিলাসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্বাসরোধ করে খুন, ট্রলিব্যাগে ভরে ফ্রিজারে সংরক্ষণ!
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, গত ৮ জুন দক্ষিণ ইন্দ্রনগর কবরখালা এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ দাসের বাড়িতে সরিফুলকে ডাকা হয়। উপহার দেওয়ার নাম করে দিবাকর তাকে সেখানে ডেকে পাঠান। সরিফুল সেখানে আসার পরই দিবাকর এবং তার দুই সঙ্গী তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর, দু’দিন আগে কেনা একটি ট্রলিব্যাগে সরিফুলের দেহ রাখা হয়। পরের দিন দিবাকরের বাবা-মা দীপক এবং দেবিকা সাহা ওই ট্রলিব্যাগ নিয়ে গণ্ডাছেড়া বাজারে আসেন এবং সেখানকার একটি দোকানের আইসক্রিম ফ্রিজারের মধ্যে সেটি রেখে দেন। এই ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা পুলিশের কাছেও এক বিস্ময়কর ঘটনা হিসেবে ধরা দিয়েছে।
একই দিনে দুই রাজ্যে খুনের কিনারা
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে মঙ্গলবার রাতে দিবাকর এবং তার সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জেরা করেই বুধবার ওই ট্রলিব্যাগ ও সরিফুলের দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, সরিফুল, দিবাকর এবং ওই মহিলার মধ্যে প্রেম নিয়ে যে একটি বিবাদ চলছিল, তার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে।
যেদিন মেঘালয়ের ‘হানিমুন মার্ডার’ কেসে অভিযুক্ত সোনমকে শিলং জেলা আদালতে তোলা হয়, সেদিনই ত্রিপুরার পুলিশ এই চাঞ্চল্যকর খুনের কিনারা করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনা আবারও সম্পর্কের জটিলতা এবং তার ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, যা সমাজের গভীরে এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। পুলিশ এই ঘটনার আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করছে, যাতে প্রতিটি তথ্য উন্মোচিত হয় এবং অপরাধীরা কঠোর শাস্তি পায়।