ভারতের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান তেজস দুর্ঘটনায় উইং কমান্ডার নমন স্যালে-এর মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠলেও, আসল কারণ জানা যাবে ‘কোর্ট অফ এনকোয়ারি’ (Court of Enquiry) শেষ হওয়ার পরই। তবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে একজন যুদ্ধবিমান চালক হিসেবে বিশেষজ্ঞরা এই দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ ও এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকির দিকগুলি তুলে ধরেছেন।
নেগেটিভ জি টার্ন ও ব্ল্যাকআউটের ঝুঁকি
তেজস দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল খুবই কম উচ্চতায়, যখন পাইলট ‘নেগেটিভ জি টার্ন’ নামক একটি কসরৎ দেখাচ্ছিলেন। কম উচ্চতায় এই ধরনের কসরৎ অত্যন্ত কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
-
জি-ফোর্স ব্ল্যাকআউট: বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই সময় পাইলট সম্ভবত ‘জি-ফোর্স ব্ল্যাকআউট’-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরাট আকর্ষণ সাময়িক জ্ঞান হারানো, উচ্চতা ও গতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে না পারার মতো সমস্যা তৈরি করে, যার ফলে বিমানের নিয়ন্ত্রণ হাত থেকে বেরিয়ে যায়।
-
বিপর্যয়কর উচ্চতা: দুর্ঘটনার আগে তেজস আকাশে একের পর এক ওলট-পালট খেতে খেতে ‘শো’ দেখাচ্ছিল, যার জেরে বিমান অনেকটা নিচে নেমে আসে। অল্প উচ্চতায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময় ও জায়গা খুবই কম থাকে।
পাইলটের প্রস্তুতি এবং যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনা
বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে আগুন ধরে যাওয়ার আগে উইং কমান্ডার নমন স্যালে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
-
পাইলটের সুরক্ষা: যুদ্ধবিমানের পাইলটদের গায়ে পরা ‘অ্যান্টি জি-স্যুট’ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব থেকে তাঁদের মুক্ত রাখে। এ ছাড়াও পাইলটদের শারীরিকভাবে ভীষণরকম সক্ষম হতে হয়। শহীদ নমন স্যালে বহুবার এই চ্যালেঞ্জিং কসরতের অনুশীলন করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত দক্ষ পাইলট।
-
অন্যান্য সমস্যা: এই ধরনের পরিস্থিতিতে পাইলট জ্ঞান হারাতে পারেন, ক্লান্তিবোধ ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরি হতে পারে। এর পাশাপাশি, যান্ত্রিক ত্রুটি—যেমন বিমানের ইঞ্জিনে বা অন্য কোনো যন্ত্রে ত্রুটিও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ‘শো’-এর জন্য বিমান চালনার অনুমতি খুবই কম দেওয়া হয় এবং এর জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম প্রয়োজন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও আসল সত্য উদ্ঘাটনের জন্য সবাইকে ‘কোর্ট অফ এনকোয়ারি’-এর রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।