বিহারের রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ভোটার আইডি কার্ড সংক্রান্ত বিতর্ক। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছেন যে তাঁর নিজস্ব EPIC (নির্বাচকদের ছবি পরিচয়পত্র) নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে, যা তিনি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন। তাঁর এই দাবি শুধু নিজের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেনি, বরং বিহারের সমগ্র নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।
মূল অভিযোগ ও অন্তর্নিহিত আশঙ্কা:
তেজস্বী যাদব প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি আমার EPIC নম্বর পরিবর্তন করা যায়, তাহলে কত লোকের EPIC নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে?” তাঁর এই প্রশ্ন কেবল একটি ব্যক্তিগত ত্রুটির দিকে ইঙ্গিত করে না, বরং এটি ভোটার তালিকা থেকে পরিকল্পিতভাবে নাম বাদ দেওয়ার একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা জাগিয়ে তোলে। তিনি অবিলম্বে এই বিষয়ে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, কারণ তাঁর মতে এটি নিছক প্রযুক্তিগত ত্রুটি হতে পারে না, বরং এটি গণতন্ত্রকে প্রভাবিত করার একটি অপচেষ্টা। তেজস্বীর এই মন্তব্যের পর থেকেই বিহারের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বিরোধী দলগুলি তাঁর অভিযোগকে সমর্থন করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দ্রুত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
পূর্বের দাবি ও কমিশনের প্রতিক্রিয়া:
বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল যখন তেজস্বী যাদব প্রথমে দাবি করেন যে, বিহার নির্বাচন কমিশন কর্তৃক শুক্রবার প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় তাঁর নাম অনুপস্থিত। তিনি নির্বাচন কমিশনের পোর্টালে RAB2916120 নম্বর দিয়ে সার্চ করেও কোনো রেকর্ড পাননি বলে জানান। তবে, নির্বাচন কমিশন দ্রুত এই বিষয়ে স্পষ্টীকরণ দিয়ে জানায় যে তেজস্বী যাদবের নাম, ছবি, বয়স, পিতার নাম এবং বাড়ির নম্বর সহ সমস্ত তথ্যই সঠিকভাবে ভোটার তালিকায় বিদ্যমান।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের স্পষ্টীকরণ:
পাটনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) ডঃ ত্যাগরাজন এসএম তেজস্বীর অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, “বিরোধী দলনেতার নাম অবশ্যই আছে। তাঁর নাম নেই – এই দাবি সম্পূর্ণ ভুল। তিনি যে বুথে ভোট দিতেন, সেখানে এখনও তাঁর নাম রয়েছে।” তিনি পাটনার সমস্ত ভোটারদের খসড়া তালিকা ধৈর্যের সঙ্গে যাচাই করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন যে, এতে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। ডিএম আরও জোর দিয়ে বলেন, “২০২০ সালের নির্বাচনে মনোনয়নের সময় তিনি (তেজস্বী) যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন, তাতে তিনি এই EPIC নম্বরই (RAB2916120) দিয়েছিলেন, এবং সেটি এখনও রয়েছে। এতে কোনও পরিবর্তন হয়নি।” ডিএমের বক্তব্য অনুযায়ী, যদি তেজস্বী অন্য কোনো EPIC কার্ড দেখে থাকেন, তবে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
এই ঘটনা বিহারের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার উপর আস্থা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যেহেতু EPIC নম্বর ভোটারের মৌলিক পরিচয়, তাই এই ধরনের অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিহারের রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ এই বিতর্কের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা বজায় রাখার দিকে তাকিয়ে আছে।