আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের বিস্ফোরক মন্তব্য ফের রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২০০-এর নিচে নেমে আসার সম্ভাবনার কথা তিনি জোর গলায় বলেছেন, যা শাসক দলের অন্দরে তীব্র অস্বস্তি তৈরি করেছে। ওয়াকফ ইস্যুতে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, যার জেরে সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ হাতছাড়া হতে পারে বলে তার আশঙ্কা।
বুধবার হুগলির চুঁচুড়ায় এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং বিধায়ক হুমায়ুন কবীর উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে তাদের ভিন্ন মত উঠে আসে।
বিধায়ক হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, “২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আসন সংখ্যা দু’শোর নীচে নেমে যাবে।” তিনি আরও দাবি করেন, আগামী নির্বাচনে বাম এবং কংগ্রেস জোট ৩০ থেকে ৪০টি আসন পেতে পারে। হুমায়ুনের এই মন্তব্য দলের জন্য একেবারেই সুখকর নয়।
ওয়াকফ প্রসঙ্গ টেনে বিধায়ক হুমায়ুন বলেন, “রাজ্যে একশোটি বিধানসভা আসনে সংখ্যালঘুরা শক্ত ঘাঁটি। রাজ্যে সংখ্যালঘুরা আন্দোলন করতে পারেনি। তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। ফলে সংখ্যালঘুরা ক্ষুব্ধ।” তিনি আরও যোগ করেন, “শুধু তাই নয়, পহেলগাঁও কাণ্ডের জন্যও সংখ্যালঘুদের দাগিয়ে দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ আছে। তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে না বোঝালে দল বিপদে পড়বে।” তার এই মন্তব্য তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে সম্ভাব্য ফাটলের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী অবশ্য হুমায়ুনের দাবি সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, আগামী বছর বিধানসভা ভোটে তৃণমূল আড়াইশোর বেশি আসন পাবে। তার মতে, সিপিএম-কংগ্রেস রাজ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং বিজেপির আসনসংখ্যা ৫০-এর নিচে নেমে আসবে।
এদিকে, বুধবারই বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল স্পষ্ট জানিয়েছেন, “কোন কেন্দ্রের বিধায়ক কী বললেন, তাতে তৃণমূলের কিছু যায় আসে না।” এমনকি তিনি এও বলেন, “অসুবিধা হলে ছেড়ে দিক। কেউ বারণ করছে না।” কুণাল ঘোষের এই কড়া মন্তব্য হুমায়ুন কবীরের প্রতি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অসন্তোষের ইঙ্গিতবাহী।
হুমায়ুন কবীরের এই মন্তব্যগুলি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে ভিন্ন মতকে জনসমক্ষে নিয়ে এসেছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এই ধরনের মন্তব্য দলের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।