তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের রায়, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত না জানিয়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখল আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার নির্দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করলেও, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের পক্ষ থেকে এই রায়ের বিষয়ে সরাসরি কোনো স্বাগতিক বার্তা বা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশ নেবে না।

আওয়ামী লীগের মূল অবস্থান (পূর্ববর্তী রায় ও ঘটনা প্রবাহের ভিত্তিতে):

  • নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর থেকেই আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রায় ঘোষণার আগে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত তাঁরা (আওয়ামী লীগ) ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও করবেন না। এই অবস্থান থেকেই বোঝা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল হলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে নারাজ।

  • রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ: ভারত থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে “পক্ষপাতদুষ্ট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে নিন্দা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাঁকে স্থায়ীভাবে রাজনীতি থেকে সরাতে এই ‘রিগড ট্রাইব্যুনাল’ তৈরি করেছে।

  • প্রতিবাদ: ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ দেশজুড়ে ‘শাটডাউনের’ (ধর্মঘট) ডাক দিয়েছিল। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ইঙ্গিত দেয় যে আওয়ামী লীগ আদালত এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করছে।

  • দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা: এর আগে (মে 2025-এর দিকে), মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সমস্ত কার্যকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, যাকে আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদী’ সিদ্ধান্ত বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে।

যদিও সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের রায়টি বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি দ্বারা ‘ইতিবাচক’‘যুগান্তকারী’ হিসেবে স্বাগত জানানো হয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থান তাদের নির্বাচন থেকে দূরে থাকার এবং ট্রাইব্যুনালের রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করছে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে দূরে থাকায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নির্দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রভাব দেখা যাবে না। তবে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ‘নতুন দিগন্ত’ উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy