ডুয়ার্সের পথে টোটো চড়ে হাজির ‘সবুজ সান্টা’! চকোলেট নয়, ছোটদের হাতে তুলে দিলেন এক অনন্য উপহার

বড়দিনের সকালে ডুয়ার্সের রাস্তায় এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালেন পথচারীরা। লাল পোশাক, সাদা দাড়ি আর টুপি পরে সান্টাক্লজ সেজে টোটো চালাচ্ছেন এক ব্যক্তি। তবে তাঁর ঝোলায় কেবল চকোলেট বা খেলনা নয়, রয়েছে এক মহৎ উদ্দেশ্য। তিনি আশুতোষ রায়, এলাকায় ‘ভজন’ নামেই পরিচিত। পেশায় টোটো চালক হলেও বড়দিনে তিনি সেজেছেন ‘প্রকৃতি প্রেমী সান্টা’।

কেন এই অভিনব উদ্যোগ? বিগত কয়েক মাস ধরে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বারবার হাতির হানা বা চিতাবাঘের আতঙ্কে রক্ত ঝরেছে মানুষের, প্রাণ গিয়েছে অবলা প্রাণীদেরও। বন দপ্তরের রাতের ঘুম উড়েছে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে। ভজন মনে করেন, উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার ফলেই জঙ্গল ছোট হয়ে আসছে এবং বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এই সংকট থেকেই মানুষকে সচেতন করতে পথে নেমেছেন তিনি।

চকোলেটের সাথে চারা গাছ: বানারহাটের গয়েরকাটা থেকে শুরু করে ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্তে নিজের সুসজ্জিত টোটো নিয়ে ঘুরে বেড়ান ভজন। শিশুদের হাতে সাধ্যমতো চকোলেট তুলে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি উপহার দিচ্ছেন ছোট ছোট চারা গাছ। শুধু শিশুরাই নয়, বড়দের কাছেও তাঁর একান্ত অনুরোধ— গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান। তিনি বুঝিয়ে বলছেন, গাছ মানুষের পরম বন্ধু এবং বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করতে হলে বনাঞ্চল রক্ষা করা কতটা জরুরি।

জনমানুষের প্রতিক্রিয়া: আশুতোষ ওরফে ভজনের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন পরিবেশপ্রেমী থেকে শুরু করে স্থানীয় সাধারণ মানুষ। পরিবেশবিদদের মতে, এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগই পারে নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ সচেতন করে তুলতে। ভজনের কথায়, “মানুষ যদি বন্যপ্রাণের গুরুত্ব বোঝে এবং গাছ কাটায় লাগাম টানে, তবেই আমাদের ডুয়ার্স আবার শান্ত হবে।” বড়দিনের আনন্দকে সমাজসেবার আঙিনায় নিয়ে এসে ভজন এখন ডুয়ার্সের সত্যিকারের নায়ক।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy