পাঁচ ম্যাচের সিরিজে চতুর্থ টেস্টে ওভালে এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মাত্র ৬ রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ভারতীয় দল। এই ঐতিহাসিক জয় ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার ঝড় তুলেছে। চারদিন ধরে ভারতীয় দল এই টেস্টে দাপট দেখালেও, হ্যারি ব্রুক এবং জো রুটের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ড যেভাবে লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল, তাতে একসময় ভারতের জয়ের আশা প্রায় শেষই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ হাসি হাসল ভারতই। কোন পাঁচটি কৌশলে ভারত এই অসাধ্য সাধন করল, দেখে নেওয়া যাক:
১. সিরাজের অপ্রতিরোধ্য বোলিং:
দুই ইনিংসেই মোহাম্মদ সিরাজ ছিলেন ভারতের প্রধান অস্ত্র। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তুলে নেন ৫ উইকেট। ম্যাচের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সঠিক জায়গায় ক্রমাগত বল করে যাওয়ার ফল তিনি হাতে নাতে পেয়েছেন। অফ স্টাম্পের বাইরে পঞ্চম স্ট্যাম্পকে লক্ষ্য করে তাঁর বোলিং ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের বারবার ভুল করতে বাধ্য করেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী বল ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের এই তারকা বোলারকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। জসপ্রীত বুমরাহর অনুপস্থিতিতে সিরাজকে অনেক বড় দায়িত্ব নিতে হয়েছিল, এবং তিনি গোটা সিরিজেই সেই কাজটি দারুণভাবে করে গেছেন।
২. গিলের বিচক্ষণ নেতৃত্ব:
অধিনায়ক হিসেবে শুভমান গিলের এটিই প্রথম সিরিজ। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির অবসরের পর, এই সিরিজটি ছিল তাঁর জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। চতুর্থ দিনে লাঞ্চের পর, ভারতের জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সিরাজ ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাসহ গোটা দলকে উজ্জীবিত করার কাজটি একাই সামলেছেন অধিনায়ক গিল। বারবার বোলারদের সঙ্গে আলোচনা করে ফিল্ডিংয়ে পরিবর্তন আনা এবং সঠিক সময়ে বোলারদের পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তগুলো গিল দারুণভাবে নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই দল এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
৩. টেলএন্ডারদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটিং অবদান:
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বোলার আকাশদীপের ভূমিকা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তাঁর ৬৬ রানের ইনিংস সবাইকে অবাক করে দিয়েছিল। নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাট করতে নেমে এমন ব্যাটিং দীর্ঘদিন দেখা যায়নি। রেকর্ড বলছে, অমিত মিশ্রর পর নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে এটিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরের ৫৫ রানের ইনিংস ভারতকে এক দারুণ জায়গায় পৌঁছে দেয়। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের টেলএন্ডাররা দ্বিতীয় ইনিংসে তেমন বড় রান করতে পারেননি। চাপের মুখে তাদের ব্যাটিং ভেঙে পড়ে, আর এটাই দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।
৪. ‘টি’ বিরতির পর খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া:
যেকোনো বিরতির পরেই ব্যাট করতে আসা কঠিন হয়, আর এই সুযোগটাই ভারত কাজে লাগিয়েছে। ‘টি’ বিরতির পর খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা। পরপর দুই উইকেট তুলে নেন তিনি। সেঞ্চুরি করা জো রুটের পর, জ্যাকব বেথেলকে আউট করে তিনি ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। এরপর থেকেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি টিম ইন্ডিয়াকে। এই দুটি উইকেটই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
৫. ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক:
প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা দিশাহারা হয়ে পড়েন। পঞ্চম দিনের শুরু থেকেই তারা বড় শট খেলে ম্যাচ বের করে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন, যা একেবারেই কাজে আসেনি। কারণ ভারত একই জায়গায় ক্রমাগত বল করে গেছে। আর তার ফল ভারত পেয়ে যায় হাতেনাতে – মাত্র ৩৫ রানের জন্য ৪ উইকেট তুলে নেয় ভারতীয় দল। যদি ঠান্ডা মাথায় খেলত, তাহলে হয়তো ম্যাচটি বের করে নিতে পারত ইংল্যান্ড। কিন্তু চাপের মুখে তাদের প্যানিক ব্যাটিংই জয়ের পথ খুলে দেয় ভারতের জন্য।
এই জয় শুধু সিরিজে সমতাই ফেরাল না, ভারতীয় দলের নবীন ক্রিকেটারদের মানসিক দৃঢ়তা এবং লড়াই করার ক্ষমতাও প্রমাণ করে দিল।