ঝুঁকিপূর্ণ প্রাচীন মন্দির ফেরাবে জৌলুস! মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বীরভূমের ১৪ শিব মন্দিরের সংস্কারের আশা, ভক্তদের মধ্যে খুশির হাওয়া

প্রাচীন স্থাপত্য এবং ইতিহাসের সন্ধানে যারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য আদর্শ গন্তব্য হলো বীরভূমের মোহাম্মদবাজার ব্লকের গণপুর গ্রাম। এই গ্রামেই রয়েছে এক বিরল স্থাপত্যের নিদর্শন—একই প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে ১৪টি চারচালা শিব মন্দির। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরগুলি বর্তমানে তার কারুকার্যের জন্য পর্যটকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

ইতিহাসে মিশে আছে দুর্ভিক্ষের করুণ কাহিনি
কথিত আছে, ১৭৭৬ থেকে ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চৌধুরী পরিবার এই মন্দিরগুলি নির্মাণ করেন। এর নির্মাণের পিছনে রয়েছে এক করুণ ইতিহাস।

কাজের বিনিময়ে খাবার: সেই সময় বীরভূমবাসী ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছিলেন। গ্রামবাসীদের সাহায্য করতে চৌধুরী পরিবার খাবারের বিনিময়ে মন্দিরের কাজে লাগানোর রীতি চালু করেন। অর্থাৎ, মন্দিরের কাজ করে তাঁরা খাবার পেতেন।

এই মন্দিরগুলি চারটি পূর্বমুখী, তিনটি দক্ষিণমুখী এবং সাতটি পশ্চিমমুখী—এই বিশেষ বিন্যাসে নির্মিত।

মন্দিরের মূল আকর্ষণ: লঙ্কা যুদ্ধ ও দেব-দেবীর কারুকার্য
এই মন্দিরগুলির স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর ফুল পাতার নকশা এবং পোড়ামাটির অপূর্ব কারুকার্য। মন্দিরের সামনের মুখে দেখা যায়:

লঙ্কা যুদ্ধ

সপরিবারে দুর্গা

দশাবতার

এই সমস্ত পৌরাণিক দৃশ্যের সূক্ষ্ম কারুকার্যই মন্দিরগুলিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। বর্তমানে চৌধুরী পরিবার কর্তৃক তৈরি একটি ট্রাস্ট মন্দিরগুলির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ভক্তরা
দীর্ঘ আড়াইশো বছরের বেশি সময় পার হওয়ায় এই প্রাচীন মন্দিরগুলি বর্তমানে জীর্ণদশায়। শিবরাত্রি ও কালীপুজোর মতো অনুষ্ঠানে এখানে দূর-দূরান্তের মানুষের ঢল নামলেও, সংস্কারের অভাবে মন্দিরগুলির জৌলুস কমছে।

তবে সম্প্রতি রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির রক্ষার্থে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ উদ্যোগের কারণে ভক্তদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা আশা করছেন, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় রাজ্য প্রশাসনের উদ্যোগে খুব শীঘ্রই এই ১৪ শিব মন্দিরের সংস্কারের কাজ শুরু হবে।

বীরভূম ভ্রমণে এলে মোহাম্মদবাজার ব্লকের গণপুরের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলি একবার ঘুরে আসা অবশ্যই উচিত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy