প্রখ্যাত অসমীয়া গায়ক জুবিন গার্গের রহস্যময় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তদন্তে বড়সড় অগ্রগতি করল অসমের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (CID)। মঙ্গলবার গভীর রাতে সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গায়কের মৃত্যু মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের আয়োজক শ্যামকানু মহন্তকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার এই দুই অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
দিল্লি ও রাজস্থান থেকে গ্রেফতার
তদন্তকারী সূত্রে খবর:
শ্যামকানু মহন্তকে বুধবার ভোররাতে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে আটক করে SIT। সেখান থেকে তাঁকে সরাসরি গুয়াহাটি নিয়ে আসা হয়।
সিদ্ধার্থ শর্মাকে রাজস্থানে একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকেও শীঘ্রই অসমে নিয়ে আসা হবে বলে জানা গিয়েছে।
শ্যামকানু মহন্তের বিরুদ্ধে আর্থিক অপরাধের গুরুতর অভিযোগ
শ্যামকানু মহন্তের বিরুদ্ধে এখন শুধু জুবিন গার্গের মৃত্যু মামলা নয়, আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে আলাদা তদন্ত শুরু করেছে অসম পুলিশ। সরকারি নথি অনুযায়ী, তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের অর্থ লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং বেআইনি উপায়ে বিপুল সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, শ্যামকানু হলেন প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ভাস্কর জ্যোতি মহন্তের ছোট ভাই এবং তাঁর আরেক ভাই গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
সিআইডির তল্লাশিতে উদ্ধার হওয়া প্রমাণ
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার শ্যামকানুর গুয়াহাটির বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে সিআইডি প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
একই প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক প্যান কার্ড।
প্রায় ৩০টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার স্ট্যাম্প সিল।
একাধিক সন্দেহজনক বেনামি সম্পত্তির নথি।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই নথিগুলি গায়কের মৃত্যু সংক্রান্ত আর্থিক অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
আইন নিজের পথে চলবে: গরিমা গর্গ
এই মামলায় এখন পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন থানায় প্রায় ৬০টিরও বেশি এফআইআর দায়ের হয়েছে শ্যামকানু মহন্ত এবং ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা সহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার চুক্তির টাকা এবং আর্থিক হিসাব-নিকাশ নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম করা হয়েছিল।
জুবিন গার্গের স্ত্রী গরিমা গর্গ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমার বিশ্বাস, আইন নিজের পথেই চলবে। আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তারা যেন আইনের শাস্তি পায়, সেটাই আমার একমাত্র কামনা।”
তদন্তকারীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এই মামলায় আগামী দিনে আরও প্রভাবশালী নাম সামনে আসতে পারে, কারণ তদন্ত এখন শুধু মৃত্যু নয়, এর পেছনের আর্থিক জালকেও খতিয়ে দেখছে