চিকিৎসকদের সমস্ত লড়াই ব্যর্থ করে চিরবিদায় নিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। সংবাদ সংস্থা প্রথম আলো সূত্রে খবর, বর্তমানে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর রাষ্ট্র হতেই বাংলাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শৈশব থেকে বেগম খালেদা জিয়া: ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরের মুদিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন খালেদা খানম পুতুল। তাঁর বাবা ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। শৈশবে মিশন স্কুল ও পরে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করেন তিনি। ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় এবং তিনি পরিচিত হন বেগম খালেদা জিয়া নামে।
রাজনীতির অঙ্গনে পদার্পণ: ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে স্বামী জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর খালেদার জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। তবে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে ১৯৮২ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন এবং শুরু হয় তাঁর আপসহীন রাজনৈতিক যাত্রা।
শাসনকাল ও রাজনৈতিক উত্থান-পতন: ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাস গড়েন খালেদা জিয়া। এরপর ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব সামলান। তবে ২০০৭ সাল থেকে তাঁর জীবনে দুর্নীতির মামলা ও কারাবাসের অন্ধকার অধ্যায় শুরু হয়। ২০১৮ সালে পৃথক দুটি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় কারাভোগ এবং পরবর্তীতে অসুস্থতার কারণে ২০২০ সাল থেকে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সম্প্রতি ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার খালেদাকে সমস্ত মামলা থেকে মুক্তি দেয়। ফের ভোটযুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি, কিন্তু বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ও দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান ঘটিয়ে আজ মহাপ্রয়াণ ঘটল এই প্রবীণ নেত্রীর। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতির এক বিশাল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।