বাংলার রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন হলো। প্রয়াত হলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা উপেন কিস্কু। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বুধবার রাতে বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে, বিশেষ করে জঙ্গলমহলের আদিবাসী জনজীবনে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই বাঁকুড়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। সাদামাটা জীবনযাপন এবং সাধারণের সঙ্গে নিবিড় সংযোগই ছিল তাঁর রাজনীতির মূল শক্তি। ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর, ১৯৮২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা সাতবার বাঁকুড়ার রাইপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন উপেন কিস্কু। এমনকি ২০১১ সালে যখন তৃণমূলের বিপুল ঝড়ে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটেছিল, তখনও নিজের গড় রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন এই দুঁদে আদিবাসী নেতা।
উপেন কিস্কুর রাজনৈতিক উত্থান কোনো মসৃণ পথে হয়নি। সত্তরের দশকে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার লড়াই দিয়ে তাঁর হাতেখড়ি। ‘কেন্দুপাতা আন্দোলন’-এর অন্যতম মুখ ছিলেন পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক উপেন্দ্র কিস্কু। বিড়ি শ্রমিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় তাঁর সেই আপসহীন লড়াই তাঁকে বাঁকুড়া জেলা বামপন্থীদের অন্যতম প্রধান স্তম্ভে পরিণত করে।
রাজ্যের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে তিনি তিনবার দায়িত্ব সামলেছেন। শেষবার রাইপুর থেকে জয়ী হওয়ার পর আদিবাসী ও অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের গুরুদায়িত্ব পালন করেন। রাইপুর ব্লকের সামগ্রিক উন্নয়ন, কলেজ-স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার কারিগর ছিলেন তিনিই। দলের পক্ষ থেকে শোকবার্তায় জানানো হয়েছে, জঙ্গলমহলের আদিবাসী সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরাতে তাঁর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাঁকুড়ার মাটির সন্তান উপেন কিস্কু চলে গেলেও, তাঁর দেখানো অধিকারের লড়াই থেকে যাবে জঙ্গলমহলের প্রতিটি মানুষের অন্তরে।