পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমা আবারও দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে। প্রায় এক মাস ধরে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন, চলতি মাসে এই নিয়ে চতুর্থবারের মতো বানভাসি হয়েছে ঘাটাল। পৌর এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, সর্বত্র রাস্তাঘাট জলের নিচে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। কবে এই জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে, সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন ঘাটালবাসী।
বর্তমানে ঘাটাল পৌর এলাকার পাশাপাশি ঘাটাল ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাও সম্পূর্ণ জলমগ্ন। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা থেকে শুরু করে বাজারহাট, সবকিছুর জন্যই মানুষ বাধ্য হচ্ছেন ডিঙি নৌকা বা অন্যান্য জলযান ব্যবহার করতে। বন্যার জল স্কুলে প্রবেশ করায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠন-পাঠন বন্ধ রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
জল নামলেও স্বস্তি নেই, ফের বাড়ছে জলস্তর:
এক মাসের কাছাকাছি সময় ধরে জলমগ্ন থাকলেও, ধীর গতিতে বন্যার জল কিছুটা কমতে শুরু করেছিল। তবে, সম্প্রতি নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীগুলির জলস্তর আবারও বাড়ছে। এর ফলস্বরূপ, নতুন করে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রাজ্য সড়কের আরগোড়া চাতাল এলাকায় জলস্তর ক্রমাগত বাড়ছে, যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করছে।
প্রশাসনের তৎপরতা, তবু সমাধান অধরা:
বন্যা দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিভিন্ন থানায় রান্না করা খিচুড়ি বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নৌকা করে প্রশাসনিক আধিকারিকরা রান্না করা খাবার দুর্গত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। পুলিশের এই উদ্যোগে বন্যা কবলিত মানুষজন কিছুটা স্বস্তি পেলেও, তাদের মূল প্রশ্ন একটাই – এই দীর্ঘস্থায়ী জল যন্ত্রণা থেকে তারা কবে স্থায়ী মুক্তি পাবেন?
সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া অবশ্য সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে, যা এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, ঘাটালবাসীর কাছে মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন যেন এক সুদূর স্বপ্ন। তাদের দৈনন্দিন জীবন এখন পুরোপুরি জলের উপর নির্ভরশীল, আর এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তারা দিন কাটাচ্ছেন।