দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য এক বড় ধাক্কার খবর এল। সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে দেশের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে আগামী চার বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলির (ডিসকম) বকেয়া ‘রেগুলেটরি অ্যাসেট’ মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। এর ফলে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ বিল বাড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিচারপতি পিএস নরসিংহ ও অতুল এস চন্দুরকরের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেয়। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে যে, রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনগুলিকে (SERCs) এই বিশাল বকেয়া আদায়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ার ওপর নজরদারি করবে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল ফর ইলেকট্রিসিটি (APTEL)।
‘রেগুলেটরি অ্যাসেট’ কী?
‘রেগুলেটরি অ্যাসেট’ হলো সেই আর্থিক ঘাটতি, যা বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির হয় যখন তাদের প্রকৃত খরচ ও রাজ্য সরকার দ্বারা নির্ধারিত কম ট্যারিফের মধ্যে পার্থক্য থাকে। অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে বিদ্যুতের দাম কমিয়ে রাখা হয়, কিন্তু সেই ঘাটতি ‘ডিসকম’ সংস্থাগুলির পাওনা হিসেবে জমা হতে থাকে, যার ওপর আবার সুদও যুক্ত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণ
আদালত SERC এবং APTEL-এর ভূমিকা নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বেঞ্চ জানায়, “দীর্ঘদিন ধরে রেগুলেটরি অ্যাসেট বেড়ে চলেছে, যা শেষ পর্যন্ত গ্রাহকের ওপর চাপানো হয়। কমিশনের অদক্ষতা এবং রাজনৈতিক নির্দেশে চলার সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
গ্রাহকদের ওপর প্রভাব
এই রায়ের ফলে বিদ্যুৎ বিল রাতারাতি দ্বিগুণ না হলেও, আগামী চার বছরে ধাপে ধাপে ট্যারিফ বাড়ানো হবে। একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, “বাড়তি খরচ গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক এবং শিল্প—সব ধরনের গ্রাহকের ওপর ভাগ করে দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, এই রায় এক অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সাহায্য করবে, যা যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারত।
রাজ্যগুলির জন্য নির্দেশনা
সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত রাজ্য বিদ্যুৎ কমিশনকে এই বকেয়া মেটানোর জন্য সময়-নির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের বকেয়া না জমে, সেদিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ট্যারিফের সঙ্গে রেগুলেটরি অ্যাসেটকে আলাদা করার কথাও ভাবতে বলা হয়েছে।
এই রায় দেশের বিদ্যুৎ খাতের আর্থিক ও নীতিগত চ্যালেঞ্জগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। আপাতত গ্রাহকদের কিছুটা বেশি বিদ্যুৎ বিলের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, তবে এর ফলে হয়তো দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে এগোতে পারবে।