গৌড় কলেজে অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে মানসিক হেনস্তা ও নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ, অধ্যক্ষের কাছে বিক্ষোভ

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ পুরাতন মালদার গৌড় কলেজে সাংবাদিকতা বিভাগের এক অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন, হুমকি ও নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার রাতে এই বিভাগের পড়ুয়ারা অভিযুক্ত অধ্যাপিকা নাফিসা খান লোদিকে ঘেরাও করে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখান। অধ্যক্ষ পড়ুয়াদের অভিযোগের সারবত্তা স্বীকার করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, বিভাগীয় প্রধান নাফিসা খান লোদি তার অপছন্দের পড়ুয়াদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি তার কাছে প্রাইভেট টিউশন না পড়লে প্রজেক্টে নম্বর কমিয়ে দেওয়ার এবং ভবিষ্যৎ নষ্ট করার হুমকি দেন। এছাড়াও তিনি অন্যান্য অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে তাদের ক্লাস করতে বারণ করেন।

দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা কর্মকার জানান, “ম্যাডাম আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন এবং কোনো কারণ ছাড়াই ফাইন আদায় করেন, যার কোনো রসিদও দেন না। আমি তার কাছে টিউশন না পড়ায় ৫০ নম্বরের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় আমাকে মাত্র ১৭ দিয়েছেন, অথচ তার কাছে যারা পড়ে তাদের ৪০-৪৫ নম্বর দিয়েছেন। আমরা সবাই মানসিক অবসাদে ভুগছি।”

অন্য এক ছাত্রী তুলিকা মণ্ডলের অভিযোগ, অধ্যাপিকা নাফিসা খান লোদি নম্বর কম দেওয়া এবং অধ্যক্ষের কাছে নালিশ করার হুমকি দিয়ে পড়ুয়াদের ব্ল্যাকমেইল করেন। তিনি আরও বলেন, “ম্যাডামের ক্লাস না থাকলেও সবাইকে কলেজে আসতে বলেন। একদিন তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে কলেজে আসতে বলেন। আমি প্রশ্ন তোলায় তিনি আমাকে অধ্যক্ষের কাছে নিয়ে গিয়ে বদনাম করার হুমকি দেন।”

অধ্যক্ষ ড. অসীমকুমার সরকার এই বিষয়ে বলেন, “মাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের এই সমস্যাটি বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। আমরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডেকেছি এবং পড়ুয়াদের অভিযোগ শুনেছি। আমাদের মনে হয়েছে তাদের অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন নয়।” তিনি জানান, তিনি এই বিষয়টি কলেজের গভর্নিং বডিতে জানাবেন এবং অভিযুক্ত অধ্যাপিকাকে এর আগে সতর্ক করা হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। অধ্যক্ষ পড়ুয়াদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তাদের সমস্ত অভিযোগের প্রতিকার করা হবে।

অন্যদিকে, অভিযুক্ত অধ্যাপিকা নাফিসা খান লোদি সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতে রাজি হননি। তিনি কেবল বলেন, “এক পক্ষের কথা শুনে হবে না, অন্য পক্ষের কথাও শুনতে হবে।” এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের শিক্ষা পরিবেশ এবং পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy