বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণে এক নতুন মাইলফলক তৈরি করল পশ্চিমবঙ্গ। আগ্রা, উদয়পুর, গোয়া কিংবা কেরালার মতো ঐতিহ্যবাহী ডেস্টিনেশনকে পিছনে ফেলে পশ্চিমবঙ্গ এখন বিদেশি পর্যটকদের কাছে দেশের মধ্যে অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে।
সম্প্রতি ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়া ট্যুরিজম ডেটা কম্পেন্ডিয়াম ২০২৫’ অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি পর্যটক আকর্ষণকারী রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সাফল্যকে রাজ্যের জন্য এক বিরাট মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
📈 অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান
শুধুমাত্র গত বছরই প্রায় ৩০ লক্ষ বিদেশি পর্যটক পশ্চিমবঙ্গের নানা পর্যটন স্থানে পা রেখেছেন। যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ১৫% বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই সংখ্যাটি এক বছরে গোয়া এবং কেরালায় বেড়াতে যাওয়া মোট বিদেশি পর্যটকের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।
🌟 সাফল্যের নেপথ্যে প্রধান কারণগুলি
পশ্চিমবঙ্গ বিদেশিদের কাছে এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পিছনে বেশ কিছু কৌশলগত কারণ কাজ করেছে:
১. দুর্গাপূজার হেরিটেজ স্বীকৃতি: এই সাফল্যের নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো ২০২২ সালে UNESCO থেকে দুর্গাপূজার ‘কালচারাল হেরিটেজ’ স্বীকৃতি লাভ। ২০২৩, ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে কলকাতার বিভিন্ন প্যান্ডেলে বিদেশি নাগরিকদের ভিড় রাজ্যের পর্যটনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
২. নতুন উৎস দেশ: এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইটালি এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলি থেকেও পর্যটকরা পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। গত এক বছরে আমেরিকা থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন।
৩. উত্তরবঙ্গে নজর: পশ্চিমবঙ্গে রাতারাতি পর্যটক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পিছনে চা-বাগান পর্যটন এবং উত্তরবঙ্গের পরিকাঠামো উন্নয়ন একটি বড় ভূমিকা নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, সুন্দরবন, শান্তিনিকেতন এবং ডুয়ার্সের মতো জনপ্রিয় স্থানগুলিতে। হোমস্টে সংস্কৃতির প্রসার এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিও এর সহায়ক হয়েছে।
🏨 বাড়ছে পাঁচতারা হোটেলের সংখ্যা
পর্যটন বৃদ্ধির এই ধারা বজায় রাখতে বেসরকারি উদ্যোগও সামনে আসছে। তাজ, অম্বুজা এবং মেফেয়ারের মতো সংস্থাগুলি আগামী দিনে প্রায় ১৫টি পাঁচতারা হোটেল ও রিসর্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই উত্তরবঙ্গ এবং সিকিমে তৈরি হবে।
পর্যটন দফতর মনে করছে, এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ভবিষ্যতে বৃহত্তর বিদেশি বিনিয়োগ এবং বিশ্বমানের পর্যটন পরিষেবা তৈরির পথে রাজ্যকে সাহায্য করবে। তবে এই পরিমাণ পর্যটক ধরে রাখার জন্য পরিচ্ছন্নতা, পরিকাঠামো এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে বলেও মত প্রকাশ করা হয়েছে।