এক ভয়াবহ ঘটনায় বেঙ্গালুরুতে এক ১৩ বছর বয়সী কলেজ ছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় ওই কিশোর। রাতে পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং পরবর্তীতে অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে তার অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত:
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত কিশোরের নাম নিশ্চিত, বয়স ১৩ বছর। সে দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এবং অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বুধবার বিকেলে সে টিউশনে গিয়েছিল। প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার রাত ৮টা বেজে গেলেও নিশ্চিত বাড়ি না ফেরায় তার পরিবার খোঁজ শুরু করে। গৃহশিক্ষককে ফোন করা হলে তিনি জানান যে, পড়ুয়ার ছুটি হয়ে গেছে। বহু খোঁজাখুঁজির পরেও নিশ্চিতের সন্ধান না মেলায় তার পরিবার স্থানীয় থানায় নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করে।
মুক্তিপণ চেয়ে ফোন:
বুধবার গভীর রাত ১টা নাগাদ নিশ্চিতের বাবা, যিনি স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যাপক, জে অচিদের কাছে একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। অপহরণকারীরা তার কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং জানায় যে বৃহস্পতিবার সকালে একটি নির্দিষ্ট লোকেশন জানিয়ে দেওয়া হবে, যেখানে টাকা নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ফল মারাত্মক হবে। সেই মোতাবেক পরিবার দ্রুত টাকা জোগাড় করা শুরু করে।
অপহরণকারীদের ছলনা ও মর্মান্তিক পরিণতি:
বৃহস্পতিবার সকালে ফের অধ্যাপকের কাছে ফোন আসে। টাকা জোগাড় হয়েছে জানার পর অপহরণকারীরা একাধিক লোকেশন পাঠাতে থাকে। নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই লোকেশন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকবার এমন চলার পর অপহরণকারীর ফোন সুইচ অফ হয়ে যায় বলে পরিবার জানিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিতের বাবা পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ দ্রুত চিরুনি তল্লাশি শুরু করে। অবশেষে, বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নিশ্চিতের আধপোড়া দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্তে যা উঠে এসেছে:
তদন্তে নেমে পুলিশ নিশ্চিতের আসা-যাওয়ার পথের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে যে, বাড়ি ফেরার পথে একটি বাইক নিশ্চিতের পথ আটকায়। তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হতে দেখা যায়। এরপর নিশ্চিত তার সাইকেল রেখে ওই বাইকের পেছনে উঠে চলে যায়। একজন পুলিশ কর্তা জানান, “পরিবার টাকা দিতে রাজি শুনেই বারবার লোকেশন বদলাচ্ছিল অপহরণকারী। পুলিশ তার পিছু নিয়েছে কি না, তা দেখার জন্য এই রকম করছিল সে।”
বর্তমানে পুলিশ বাইকের ওই ব্যক্তিটির পরিচয়, তার সঙ্গে মৃত পড়ুয়ার আগে কোনো পরিচয় ছিল কিনা, কোন ফোন নম্বর থেকে বারবার ফোন আসছিল এবং সেই নম্বরের বর্তমান অবস্থান কোথায়, এইসব বিষয় খতিয়ে দেখছে। খুনের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু হয়েছে এবং পুলিশ দ্রুত অপরাধীদের ধরতে বদ্ধপরিকর। এই নৃশংস ঘটনা বেঙ্গালুরু জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ও শোকের ছায়া ফেলেছে।