মোরবি সেতু বিপর্যয়ের ভয়াবহ স্মৃতি টাটকা থাকতেই গুজরাতে ফের এক বড়সড় সেতু দুর্ঘটনা ঘটল। বুধবার সকালে মহিসাগর নদীর উপর নির্মিত গম্ভীরা সেতু ভেঙে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই দুর্ঘটনায় সৌরাষ্ট্র ও মধ্য গুজরাতের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সকাল ৭:৩০-এর বিপর্যয়: বিচ্ছিন্ন সৌরাষ্ট্র-মধ্য গুজরাত
১৯৮৬ সালে আনন্দ জেলার মুজপুরের কাছে মহিসাগর নদীর উপর নির্মিত হয়েছিল ৮৩২ মিটার দীর্ঘ গম্ভীরা সেতু, যার স্তম্ভ সংখ্যা ছিল ২৩টি। এটি মধ্য গুজরাত থেকে সৌরাষ্ট্রগামী যান চলাচলের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহৃত হত। পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় সেতুর দুই স্তম্ভের মাঝের একটি আস্ত স্ল্যাব ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। চলাচলরত একাধিক গাড়ি সশব্দে নদীতে তলিয়ে যায়। এই আকস্মিক বিপর্যয়ের ফলে সৌরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্য এবং দক্ষিণ গুজরাতের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার বেড়ে গেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি
ঘটনার খবর পেয়েই গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাঙ্ঘভি জানান, মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নির্দেশে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এদিন সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঋষিকেশ প্যাটেল বলেন, “১৯৮৫ সালে সেতুটি নির্মিত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা হয়। দ্রুত ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করা হবে।” তিনি আরও জানান, সেতু বিপর্যয়ের সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একটি দল গিয়ে পৌঁছেছে।
উদ্ধার অভিযান ও আর্থিক সহায়তা
দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই দমকল এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ভদোদরার জেলাশাসক অনিল ধামেলিয়া জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ আধিকারিকরা, ভদোদরা পুরনিগম এবং জরুরি পরিষেবার সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। উদ্ধারকাজের জন্য একাধিক বোট এবং স্থানীয় সাঁতারুদের নদীতে নামানো হয়।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল এই ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছেন। আনন্দ ও ভদোদরা জেলার শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকরাও দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সমস্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব? মোরবির পুনরাবৃত্তি?
বুধবারের এই ঘটনা ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর মোরবি সেতু বিপর্যয়ের ভয়াবহ স্মৃতিকে ফের টাটকা করে তুলেছে। প্রায় তিন বছর আগে মোরবি নদীর উপর ১৪৩ বছরের পুরনো ঝুলন্ত সেতুটি ভেঙে ১৪০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই তদন্তে উঠে এসেছিল যে, সংস্কারের পরেও সেতুটি বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। গম্ভীরা সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল তদন্তের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও, প্রায় চার দশকের পুরনো এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এই বিপর্যয় আবারও তা স্মরণ করিয়ে দিল।