অসমের কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গের রহস্যজনক মৃত্যু তদন্তে বড়সড় মোড়। সিঙ্গাপুরে সমুদ্রে ডুবে গায়কের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং সিঙ্গাপুর ইভেন্টের আয়োজক শ্যামাকানু মহন্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার ভোরে দু’জনকেই গুয়াহাটিতে নিয়ে আসা হয়েছে।
যেভাবে গ্রেফতার করা হল দু’জনকে
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দিল্লি ফিরতেই ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আয়োজক শ্যামকানু মহন্তকে আটক করা হয়। অন্যদিকে, গুরগাঁওয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেফতার করা হয় জুবিনের দীর্ঘদিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মাকে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে সমুদ্রে ডুবে মৃত্যু হয় জুবিন গার্গের। ঘটনার তদন্তে অসম সরকার স্পেশাল ডি-জিপি এম পি গুপ্তার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্তদল (SIT) গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আগেই জানিয়েছিলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে মহন্ত ও শর্মার বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি হয়েছিল। সিআইডি-র সামনে হাজিরার নির্দেশ অমান্য করায় পুলিশ এই পদক্ষেপ নেয়।
‘সবাই সন্দেহের আওতায়’: বিস্ফোরক জুবিন পত্নী গরিমা
গায়কের স্ত্রী গরিমা গর্গ একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তিনি স্বামীর মৃত্যুকে কোনোভাবেই দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হিসেবে মেনে নিচ্ছেন না। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ:
“যে-যে সেদিন সেখানে ছিল, সবাই সন্দেহের আওতায়। আমরা এফআইআর করেছি। আয়োজক, ম্যানেজার, পুরো টিম— আমরা প্রত্যেককে সন্দেহ করছি।”
গরিমা আরও দাবি করেন, তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে ‘অবহেলার কারণে’। তাঁর কথায়, জুবিন এই অনুষ্ঠানে যেতে চাননি। তিনি তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘রয় রয় বিনালে’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের পরিচিত শ্যামকানু মহন্তর জন্যই মাত্র তিন-চার দিনের জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। গরিমা অভিযোগ করেন, “জুবিন সবসময় ওকে (মহন্তকে) সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু এর বিনিময়ে ওর প্রাণ চলে গেল।”
ফৌজদারি মামলা দায়ের
আসাম পুলিশ ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং আয়োজক শ্যামকানু মহন্তর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ষড়যন্ত্র, ইচ্ছাকৃত হত্যার সমতুল্য অপরাধ এবং অবহেলার কারণে মৃত্যু ঘটানোর মামলা দায়ের করেছে। তদন্তকারী দল ইতিমধ্যেই সিঙ্গাপুরে উপস্থিত আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সিঙ্গাপুর অসম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সহ আরও কয়েকজনকে তলব করেছে।
এদিকে, বুধবার জোড়হাটে জুবিনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ ও উত্তরাধিকার রক্ষার জন্য সবার সাহায্য চেয়েছেন শোকাহত গরিমা। অসম সরকার জোরহাটে জুবিন গার্গের দ্বিতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের ঘোষণা করেছে।