একটি পরিচিত স্লোগানকে ব্যবহার করে পুলিশের জালে ধরা পড়ল এক বিশাল অস্ত্র পাচার চক্রের মূল কারবারী। বিহারের মুঙ্গের থেকে আসা এক কারিগরের দেওয়া সূত্র ধরেই রহড়ার একটি ফ্ল্যাট থেকে ১৪টি বন্দুক ও প্রায় ৯০০ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ফ্ল্যাটের মালিক, ৬৬ বছর বয়সী মধুসূদন মুখোপাধ্যায় ওরফে লিটনকে।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে খবর আসে যে, বিহারের মুঙ্গের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির এক দক্ষ কারিগর খড়দহে এসে ঘাঁটি গেড়েছে। পুলিশ খড়দহের একটি জায়গা থেকে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে এবং তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করে।
পুলিশের সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এবং গ্রেপ্তারি এড়াতে ওই যুবক পুলিশের কাছে একটি অদ্ভুত প্রস্তাব দেয়। সে বলে, “চলুন, খেলা হবে। আরও বড় জিনিস আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে।” তবে এর বিনিময়ে সে দাবি করে, তাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে সম্মত হয়ে পুলিশকে সে রহড়ার রিজেন্ট পার্ক এলাকার ‘প্রতিভা মঞ্জিল’ নামের একটি আবাসনের সামনে নিয়ে যায়।
সোমবার সকালে পুলিশ ওই আবাসন ঘিরে ফেলে। প্রথমে ফ্ল্যাটের মালিক মধুসূদন দরজা খুলতে অস্বীকার করেন। প্রায় ২০ মিনিট পর তিনি পুলিশকে ভেতরে ঢুকতে দেন, তবে শর্ত দেন যে তাকে ও ওই যুবককে ছেড়ে দিতে হবে। পুলিশ তাতে রাজি হলে দরজা খুলতেই তদন্তকারীরা ঘরের ভিতরের দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যান। ঘরের বক্স খাটের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪টি বন্দুক সাজানো ছিল। এছাড়াও হাঁড়ি, কৌটো এবং ব্যাগের মধ্যে থেকে বিভিন্ন বোরের ৯০৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ফ্ল্যাট থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, ওই যুবক মুঙ্গের থেকে আসা অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ ওই ফ্ল্যাটে অ্যাসেম্বল করে পিস্তল তৈরি করত। এছাড়াও কিছু বন্দুক ও কার্তুজ লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে বিক্রি করা হতো। পুলিশ অনুমান করছে, মধুসূদন ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা দামে এই অস্ত্র বিক্রি করত।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা জানান, “এই চক্রের আরও কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে এবং আমরা এর সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরার চেষ্টা করছি।” যদিও মুঙ্গেরের ওই যুবক এবং মধুসূদনকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ অফিসারদের একজন রসিকতার সুরে বলেন, “খেলা তো সবে শুরু।”