‘খদ্দের কমে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে!’ উৎসবের আবহেও কেন মরিয়া লড়াই করে চলেছেন বর্ধমান বাজারের এই বিক্রেতা?

শহরজুড়ে যখন আলোর বন্যা, ঢাকের শব্দ আর আনন্দের জোয়ার, ঠিক তখনই বর্ধমান বাজারে সবজি বিক্রি করে চলা ষাট বছর বয়সী এক নারীর কাছে দুর্গাপূজা নিয়ে আসে কেবলই বাড়তি চিন্তা। বছর দশেক আগে রেলের জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে গুডশেড রোডের কাছে ভাড়াবাড়িতে কোনোমতে স্বামীর সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

তাঁর কথায়, “আমাদের বসতবাড়ি নেই। সেই অর্থে দেখলে দুর্গোৎসবের বিশেষ কোনও আনন্দ নেই আমার কাছে। এই ষাট বছর বয়সে পৌঁছেও বেঁচে থাকার জন্য আমি এবং স্বামী প্রত্যেকদিন মরিয়া লড়াই করে চলেছি।”

উচ্ছেদ এবং জীবনধারণের সংগ্রাম
আগে থাকতেন রায়নগর এলাকায় রেলের জমিতে। কিন্তু ‘রেলের কাজ হবে’ বলে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়। তারপর থেকে ভাড়াবাড়িই তাঁদের ঠিকানা।

“আমার কাছে দুর্গাপুজো খুব আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না। উল্টে চিন্তা বাড়ায়। তা-ও একদিন সন্ধের পরে মণ্ডপে গিয়ে একটু হলেও মায়ের মুখটা দেখে আসি। মনটা যেন ভালো হয়। প্রত্যেক দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সংসারের খরচ বাড়ছে। নাতি, নাতনিদের পুজোয় সে ভাবে কিছু কিনেও দিতে পারি না।”

পুজোয় বাড়ে না বিক্রি, বাড়ে মহাজনের চাপ
উৎসবের সময়েও তাঁর উপার্জন বাড়ে না, বরং কমে যায়। কিন্তু কেন?

তিনি জানান, “পুজোর সময়ে বাজারের দাম যেমন বাড়ে, কেমন যেন কমতে থাকে খদ্দেরের হারও। লোকের খাবারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় সব্জি, সেই জায়গা নেয় অন্য কোনও খাবার। সেই অর্থে দেখলে বিক্রি বাড়ে না পুজোয়, বরং কমে।”

পরিবারের মানুষজন, বিশেষ করে নাতি-নাতনিরা, পুজোর সময় নতুন কিছু পাওয়ার আশায় থাকে। কিন্তু তিনি সেই চাহিদা মেটাতে পারেন না। এর ওপরে থাকে মহাজনের চাপ।

“সব মিলিয়ে সামাল দিতে পারি না। আমার এবং আমাদের মতো মানুষদের কাছে কোনও শুভ বার্তা নিয়ে আসেন না মা। কত লোকের মুখে শুনি ‘মৃন্ময়ী, চিন্ময়ী’ শব্দগুলো। ওসব বুঝি না। শুধু জানি, খেটেই খেতে হবে। কেউ কিছু দেবে না।”

তাঁর এই কথা যেন ফুটিয়ে তুলল সমাজের সেই প্রান্তিক মানুষদের জীবনসংগ্রামের কঠিন চিত্র, যাঁদের কাছে উৎসব মানে বিলাসিতা নয়, বরং এক কঠিন বাস্তবতা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy