দীর্ঘ সাড়ে চার বছরের ‘ধারা’ বজায় রাখলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আগামী সোমবার, ১ ডিসেম্বর, নবান্নে অনুষ্ঠিত হতে চলা লোকায়ুক্ত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। শুক্রবার সাংবাদিকদের সামনে এই সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বিরোধী দলনেতা। বৈঠকের আমন্ত্রণ পত্র পাওয়ার পরও শুভেন্দুর এমন কঠোর অবস্থান, রাজ্য-রাজনীতিতে ফের একবার সংঘাতের আবহ তৈরি করল।
‘দুর্নীতিগ্রস্তের সঙ্গে এক টেবিলে নয়’: কেন গরহাজির শুভেন্দু?
শুভেন্দু অধিকারী এদিন তাঁর না যাওয়ার পিছনে একাধিক বিস্ফোরক কারণ সামনে এনেছেন। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসব না।”
তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য যেমন— পার্থ চ্যাটার্জি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং অন্যান্য বিধায়করা চার্জশিট পেয়েছেন। কিন্তু সংবিধানকে অসম্মান করে মুখ্যমন্ত্রী এদের বিরুদ্ধে বিধানসভায় কোনও ব্যবস্থা নেননি। শুভেন্দুর কথায়:
-
“মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার সদস্য পার্থ চ্যাটার্জি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, একাধিক বিধায়ক চার্জশিট পেয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে বিধানসভায় রিপোর্টি করতে হয়। সেটা উনি কোনোদিনই করেন না। শুধু নিয়োগের সময় একটা চিঠি পাঠান।”
-
তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “মনোজ পন্থ যদি এক্সটেনশন না পান, তাকেই হয়ত দেখা যাবে হিউম্যান রাইটসের মেম্বার করে দিয়েছে। অতএব এই সংবিধানকে যিনি মানেন না, তাঁর মিটিংয়ে বিরোধী দলনেতার যাওয়ার কোনো প্রশ্নও ওঠে না।”
‘খগেন মুর্মুর রক্ত দেখার পর…’
লোকায়ুক্ত বৈঠকের পাশাপাশি, শুভেন্দু অধিকারী টেনে আনেন রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হিংসার প্রসঙ্গ। তাঁর কড়া মন্তব্য, “তারওপর, খগেন মুর্মুর রক্ত দেখার পরে কোনো সুস্থ চেতনা সম্পন্ন মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যেতে পারবেন না।”
নবান্ন ১ ডিসেম্বর বৈঠকে বসার জন্য আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠালেও শুভেন্দু পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তিনি যাবেন না। না যাওয়ার কারণও লিখিতভাবে নবান্নকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কী এই লোকায়ুক্ত বৈঠক?
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছরই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে লোকায়ুক্ত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যের দুর্নীতি সংক্রান্ত এই কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মতোই বিরোধী দলনেতাকেও বৈঠকে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু, বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর থেকে শুভেন্দু অধিকারী একবারও এই ধরনের বৈঠকে উপস্থিত হননি। লোকায়ুক্তের মতো সাংবিধানিক বিষয়েও তাঁর এমন অনমনীয় মনোভাব, শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্বকে আরও বাড়িয়ে দিল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।