সামান্য জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের কারণে এক সেনা জওয়ানের ১ বছরের সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম গাফিলতি এবং অবহেলা সামনে এসেছে। চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে রেফার করার চক্রের বলি হলো ছোট্ট শিশু শিবাংশ। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার শুরু:
গত ১০ জুলাই শিশু শিবাংশ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মা বুঝতে পারেন যে সে ডিহাইড্রেশনে ভুগছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে তাকে ২২ কিলোমিটার দূরের বাগেশ্বর বাজিনাথের কমিউনিটি হেল্থ সেন্টারে রেফার করা হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর সামান্য চিকিৎসা পেলেও শিশুর অবস্থার অবনতি হতে থাকে, যার ফলে তাকে আবার ২০ কিলোমিটার দূরের বাগেশ্বর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জেলা হাসপাতালে চরম অবহেলা:
শিবাংশের বাবার অভিযোগ, জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছানোর পরেও তাদের কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজের ফোনে ব্যস্ত ছিলেন এবং নার্সরা নিজেদের মধ্যে গল্প ও আড্ডায় মগ্ন ছিলেন। যখন তারা শিশুটির দিকে নজর দেন, ততক্ষণে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবার রেফার করা হয়।
রেফার-চক্রের চূড়ান্ত পরিণতি:
সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হলেও তা আড়াই ঘণ্টা পর পৌঁছায়, তাও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে। এরপর রাতের দিকে শিশুটিকে নিয়ে আলমোরা মেডিকেল কলেজে যাওয়া হয়, সেখান থেকেও আবার রেফার করা হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে নৈনিতালের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসা শুরু হয়। ১২ জুলাই শিশুটিকে ভেন্টিলেটরে রাখা হলেও ১৬ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এই খবর পৌঁছায় সীমান্তে কর্তব্যরত তার বাবার কাছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত শুরু:
এই মর্মান্তিক ঘটনা সামনে আসার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। যদি কোনো স্বাস্থ্যকর্মী তার কর্তব্য পালনে গাফিলতি দেখিয়ে থাকেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এই ঘটনা রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং মানুষের প্রতি অবহেলার চিত্র তুলে ধরেছে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।