রাজ্য সরকারের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সাহায্যে নিজেদের জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া কোচবিহারের চার কৃতী কন্যা এবার কন্যাশ্রী পুরস্কার পেতে চলেছেন। দারিদ্র্য, পরিবারের দায়িত্ব এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা অর্জন করা এই চার কন্যাকে আগামী ১৪ আগস্ট কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সম্মাননা প্রদান করবেন। রাজ্যের শিশু ও নারী কল্যাণ দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে চিঠি এসেছে।
জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনা জানিয়েছেন, সিনিয়র কন্যাশ্রী বিভাগে সৌরভী অধিকারী এবং সুদীপ্তা বিশ্বাস এই পুরস্কার পাচ্ছেন। অন্যদিকে, অ্যাক্টিভ কন্যাশ্রী উপভোক্তা বিভাগে সম্মানিত করা হবে সুষমা সরকার এবং মৌসুমী রায়কে। পুরস্কার গ্রহণের জন্য তারা আগামী ১২ আগস্ট কোচবিহার থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
অদম্য লড়াইয়ের গল্প:
- সৌরভী অধিকারী: কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সৌরভী বর্তমানে একজন পুলিশ কনস্টেবল। তার সাফল্যের পেছনে কন্যাশ্রীর অনুদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কন্যাশ্রী K-1 প্রকল্পে বছরে ১ হাজার টাকা এবং পরে K-2 প্রকল্পে এককালীন ২৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন তিনি। এই অর্থ দিয়ে তিনি চাকরির প্রস্তুতি নেন এবং ২০২৩ সালে লেডি কনস্টেবল পদে নিযুক্ত হন। সৌরভীর জীবনে এক কঠিন সময় এসেছিল যখন কলেজের পড়াশোনা শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই তার বাবা মারা যান। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। তবুও তিনি পড়াশোনা ও পাওয়ার লিফটিং চালিয়ে যান। বেঙ্গল অলিম্পিকে গোল্ড মেডেলসহ একাধিক পদকও জিতেছেন তিনি।
- সুদীপ্তা বিশ্বাস: ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিহীনতা নিয়েও সুদীপ্তা আজ স্বাবলম্বী। কন্যাশ্রীর সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ পোস্টমাস্টার পদে চাকরি পেয়েছেন। শারীরিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তার এই সাফল্য বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।
- সুষমা সরকার: কোচবিহারের বড় শোলমারি ঠাকুর পঞ্চানন হাইস্কুলের ছাত্রী সুষমা এক কৃষক পরিবারের মেয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যারাটেতে তার দক্ষতাও প্রশংসনীয়। কন্যাশ্রীর অনুদানে তার পড়ালেখা ও খেলাধুলা দুটোই নির্বিঘ্নে চলছে। সে ক্যারাটেতে গোল্ড মেডেলও জিতেছে।
- মৌসুমী রায়: কোচবিহারের গোপালপুর হাই স্কুলের ছাত্রী মৌসুমী রায় ২০২২ সালে রাজ্যস্তরের ফোক ডান্স প্রতিযোগিতায় তার স্কুলকে প্রতিনিধিত্ব করে। সে ক্যারাটেতেও রাজ্য ও জাতীয় স্তরে একাধিক গোল্ড মেডেল জিতে রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
এই চার কন্যার সাফল্য প্রমাণ করে, রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প শুধুমাত্র একটি আর্থিক সহায়তা নয়, বরং এটি মেয়েদের স্বপ্ন পূরণের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।