রবিবার সকালে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গড়করির বাসভবনকে ঘিরে এক নাটকীয় বোমাতঙ্ক ছড়ায়। সকাল ৯টা নাগাদ প্রতাপনগর থানায় একটি বেনামী ফোন আসে, যেখানে দাবি করা হয় যে গড়করির বাড়িতে বোমা রাখা আছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বিস্ফোরিত হবে। এই ফোনকল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোটা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।
খবর পাওয়ার পরপরই প্রতাপনগর থানার পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। মন্ত্রীর বাসভবনের নিরাপত্তা কর্মীদের সতর্ক করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মন্ত্রীর বাড়ি এবং তার আশেপাশের এলাকা জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান। নিরাপত্তার স্বার্থে সাময়িকভাবে ঐ এলাকায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে নিবিড় তল্লাশি চালানোর পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ফোনটি ছিল একটি ভুয়ো হুমকি। গড়করির বাড়িতে কোনো বোমা বা বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি। যদিও বড়সড় বিপদ এড়ানো গেছে, এই ঘটনা মন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
ঘটনার পরপরই সাইবার শাখা ও স্থানীয় পুলিশ ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তদন্তে নামে। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিই এই ভুয়ো ফোনকলটি করেছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ব্যক্তি মানসিকভাবে স্থিতিশীল নন বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে, এই ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা কোনো সংগঠনের যোগসাজশ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ধৃতের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভুয়ো বোমাতঙ্ক ছড়ানোর ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কখনও স্কুল, কখনও বিমানবন্দর, আবার কখনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বাড়িতে এমন ভুয়ো ফোনে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিশেষ করে উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিয়ে এমন ঘটনা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
নীতীন গড়করির মতো একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে এমন ভুয়ো হুমকি যে কতটা গুরুতর, তা এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হলো। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছে। মন্ত্রীর দপ্তর থেকেও ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীর কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের ভুয়ো ফোন কেবল প্রশাসনিক তৎপরতা নষ্ট করে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যেও অযথা আতঙ্ক তৈরি করে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ধৃতের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে তুলে পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হবে।
এই ঘটনায় প্রশাসনের দ্রুত তৎপরতায় বড়সড় বিপদ এড়ানো গেলেও, প্রশ্ন উঠছে— কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে? এর নেপথ্যে কি কোনো বড় ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে? তদন্তে এরই খোঁজ চলছে।