কৃষকদের কল্যাণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কীভাবে সরকারি আধিকারিক ও মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত কাজে অপচয় হয়েছে, তার এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এল কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (CAG) এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে। বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় কৃষকদের ফার্টিলাইজার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড সংক্রান্ত CAG রিপোর্ট জমা পড়ার পরই রাজ্য জুড়ে তীব্র হইচই শুরু হয়েছে।
CAG রিপোর্টে কী আছে?
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম NDTV-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, CAG রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কৃষকদের জন্য অনুমোদিত তহবিল থেকে সরকারি আধিকারিক, বিশেষ করে আমলা এবং মন্ত্রীদের গাড়িতে তেল ভরা, গাড়ি সার্ভিসিং করানো এবং চালকদের বেতন পরিশোধের মতো কাজে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে টাকা কৃষকদের উন্নতি, সার সরবরাহ, প্রশিক্ষণ এবং ভর্তুকি প্রদানের জন্য ব্যবহার করার কথা ছিল, সেই টাকা দিয়ে আমলা-মন্ত্রীরা নিজেদের ভ্রমণ ব্যয় নির্বাহ করেছেন।
কারা ছিলেন ক্ষমতায়?
এই উল্লিখিত সময়কালে (২০১৭-২০২২) মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বেশ পরিবর্তনশীল ছিল। এই সময়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। ২০১৮ সালে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে এবং কমলনাথ মুখ্যমন্ত্রী হন। তবে এক বছরের মধ্যেই সেই সরকার পড়ে যায় এবং শিবরাজ সিং চৌহান আবার ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন। পরবর্তীতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ লাভ করেন।
ব্যয়ের ভয়াবহ চিত্র:
CAG রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কৃষকদের জন্য নির্ধারিত অনুদানের মধ্যে ২.২৫ কোটি টাকা মাত্র ২০টি সরকারি গাড়িতে খরচ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ বছরে কৃষকদের জন্য ধার্য করা মোট অর্থের প্রায় ৯০ শতাংশই রাজ্যের সরকারি গাড়িগুলির পেছনে খরচ করা হয়েছে।
গত বছরও রাজ্যের স্টেট কোঅপারেটিভ মার্কেটিং ফেডারেশনের গাড়ির পেছনে এই বিপুল ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তখন কর্পোরেশনের এক আধিকারিক যুক্তি দিয়েছিলেন যে, এই গাড়িগুলি কৃষকদের কাছে সঠিকভাবে সার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করার জন্য টহলদারির কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে চলতি বছরে প্রকাশিত CAG রিপোর্টে সেই আধিকারিকের যুক্তি সম্পূর্ণ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সরকারি গাড়ির খরচ এই প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্যগুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে এবং কৃষকদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের এমন অপচয় রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।