শীতের মরসুমে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? রাস্তা ধসের চিরাচরিত ভয়কে দূরে সরিয়ে যারা একটি নিরিবিলি, প্রকৃতির কোলে অফবিট ডেস্টিনেশনের খোঁজ করছেন, তাদের জন্য সেরা ঠিকানা হতে পারে কালিম্পং জেলার এক লুকানো রত্ন— মাইরুং গাঁও (Myrung Gaon)। নামের মতোই মায়াবী এই গ্রাম একবার দেখলে ইট-কাঠ-পাথরের শহরে আর ফিরতে মন চাইবে না।
নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানের কোলে অবস্থিত মাইরুং। সিকিমের প্যাঙ্গোলাখা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে ভুটানের ঘন পাইন বন পর্যন্ত বিস্তৃত নেওড়াভ্যালি তার বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগতের জন্য বিখ্যাত। রেড পান্ডা থেকে ব্ল্যাক প্যান্থারের অবাধ বিচরণের এই ভূমিতেই লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে মাইরুং গাঁও।
রহস্যময় ইতিহাস, পুরাতন জনপদ
পাহাড়ের প্রাচীন পাইন গাছের ছায়ায় ঢাকা আলো-আঁধারির কুয়াশার মতোই সুপ্রাচীন এই ছোট জনবসতির ইতিহাসও রহস্যে মোড়া। গ্রামের বেশ কিছু ঘরবাড়ি, গির্জা এবং বৌদ্ধ মঠ একশো বছরেরও বেশি পুরোনো। নির্জনতা পছন্দ করা পর্যটকদের পাশাপাশি পক্ষী বিশারদ এবং ট্রেকিং-এ উৎসাহীদের জন্য এই গ্রাম আদর্শ।
মাইরুং গাঁও-এ অনায়াসে দু’দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। হোম-স্টের বিছানায় শুয়ে সামনের বিস্তৃত ডুকা ভ্যালির ওপারে বরফে মোড়া নাথুলা শৃঙ্গ এবং অল্পবিস্তর কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকিঝুঁকি দেখা এখানকার উপরি পাওনা। অলস ছুটি কাটাতে চাইলে চায়ের কাপ হাতে ব্যালকনিতে বসেই দিন পার করে দিতে পারেন।
ট্রেকিং এবং সাইট সিয়িং-এর অফুরন্ত সুযোগ
যারা একটু হাঁটাহাঁটি পছন্দ করেন, তাদের জন্য পাহাড়ি পাকদণ্ডীর অভাব নেই। মাইরুং-এর দুটি প্রচলিত ট্রেক রুট হল ডুকা ফলস এবং রিকিসুম ভিউ পয়েন্ট। এছাড়াও আশপাশের যে কোনও পায়ে চলা পথে ঘণ্টাখানেক হেঁটে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ মেলে।
অবস্থানগত দিক থেকে মাইরুং কালিম্পং ও লাভার মাঝামাঝি হওয়ায় সাইট সিয়িং-এর লিস্ট ফুরাবে না। এখান থেকে সহজেই ঘুরে আসা যায় – লাভা, লোলেগাঁও, কোলাখাম, রিশপ, রামধূরা, ইছেগাঁও, সেলারি গাঁও, পেডং, ঋষিখোলা, জুলুক এবং পুরো কালিম্পং শহর।
কীভাবে পৌঁছাবেন মাইরুং গাঁও?
দূরত্ব: নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) স্টেশন থেকে মাইরুং গাঁও-এর দূরত্ব প্রায় ৯১ কিলোমিটার। সময় লাগে ৪ ঘণ্টার কাছাকাছি। কালিম্পং শহর থেকে মাত্র ২১ কিলোমিটার ও আলগাড়া বাজার থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম।
যানবাহন: এনজেপি/বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে রিজার্ভ বা শেয়ার গাড়ি নিয়ে প্রথমে কালিম্পং টাউন পৌঁছানো যায়। এর জন্য মাথাপিছু খরচ আনুমানিক ৭০০ টাকা।
স্থানীয় পরিবহন: কালিম্পং টাউন থেকে মাইরুং গাঁও যাওয়ার জন্য শেয়ার ট্যাক্সি বা রিজার্ভ গাড়ি নিতে পারেন। এর জন্য খরচ হবে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ও খরচ
মাইরুং গাঁও-এ থাকার জন্য রয়েছে প্রচুর সুন্দর হোম-স্টে। প্রত্যেকটির অবস্থান অসাধারণ। আগে বুকিং করলে ডিসকাউন্ট পাওয়ার সুযোগ থাকে।
খরচ: থাকা-খাওয়া (ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার) নিয়ে এক রাতের জন্য খরচ মাথাপিছু প্রায় ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। মেনুতে সাধারণত চিকেন এবং পাহাড়ি আচার থাকে। বিশেষ অনুরোধে টার্কির মাংসের মতো স্থানীয় পদও চেখে দেখা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে খরচ সামান্য বাড়তে পারে।
সুতরাং, এই শীতে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপভোগ করতে চাইলে কালিম্পং-এর অনতিদূরের এই ছবির মতো সুন্দর গ্রামটিকেই গন্তব্য হিসেবে বেছে নিতে পারেন।