কারাদণ্ডের দিনেই মার্কিন মঞ্চে ৩ অ্যাওয়ার্ড জয়! ‘নীরবে ক্যামেরা চালু রাখা’ স্বাধীন নির্মাতাদের পুরস্কার উৎসর্গ জাফর পানাহির

একদিকে স্বদেশের কড়া শাস্তি, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সম্মানের বন্যা—ইরানি পরিচালক জাফর পানাহি (Jafar Panahi)-র জীবনে আবারও ধরা পড়ল নাটকীয় বৈপরীত্য। কান পাম দ’অর জয়ী এই পরিচালক যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে তাঁর নতুন ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’-এর প্রচারে ব্যস্ত, ঠিক সেই দিনই ইরান তাঁকে অনুপস্থিত অবস্থায় এক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করল।

ইরানের কঠোর রায়ে পানাহির উপর এক বছরের সাজা ছাড়াও জারি করা হয়েছে দুই বছরের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠনের সদস্য হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা। পানাহির আইনজীবী মোস্তফা নিলি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে এই খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, এই সাজা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রবিরোধী ‘প্রচারণামূলক কার্যকলাপ’-এর অভিযোগে। দ্রুতই এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।

গথাম অ্যাওয়ার্ডসে ট্রিপল জয়:

এমন কঠিন শাস্তির ঘোষণার মধ্যেই নিউ ইয়র্কের মর্যাদাপূর্ণ গথাম অ্যাওয়ার্ডসে হাজির হন পানাহি। সেখানে তিনি সেরা পরিচালক, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য এবং সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র—এই তিনটি বিভাগের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর পুরস্কার উৎসর্গ করেন সেই সব স্বাধীন চলচ্চিত্রকারদের, “যাঁরা নীরবে ক্যামেরা চালু রাখেন, কখনও বিনা সমর্থনে, কখনও জীবন বাজি রেখে, কেবলমাত্র সত্য ও মানবতার উপর বিশ্বাসে।” তিনি এই পুরস্কারকে সেই সব শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে দেখেন, “যাঁরা দেখা ও দেখানোর অধিকার হারিয়েও সৃষ্টি করে চলেছেন, বেঁচে থেকেছেন।”

অস্কারের দৌড়ে পানাহি:

তাঁর ছবি ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ ফ্রান্সের তরফে ২০২৬ সালের অস্কারের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে সরকারি মনোনয়ন পেয়েছে। বর্তমানে তিনি লস অ্যাঞ্জেলস, সিয়াটেল এবং নিউ ইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছবির প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। নিউ ইয়র্কের অনুষ্ঠান শেষে তিনি মরক্কোতে মারাকেশ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও যোগ দেবেন।

বহুদিনের সংঘাতের ইতিহাস:

ইরানি বংশোদ্ভূত, কিন্তু ফ্রান্সে বসবাসকারী পানাহির সঙ্গে ইরান সরকারের সংঘাত বহুদিনের। ২০১০ সালে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন ও রাষ্ট্র-সমালোচনামূলক চলচ্চিত্র বানানোর কারণে তাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচার’-এর অভিযোগে তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও, জামিনে মুক্ত হওয়ার পরও তিনি গোপনে ‘ট্যাক্সি’ (২০১৫)-এর মতো আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছবি বানান।

সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, দেশ ছেড়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। পানাহির কথায়: “ওই সব চলচ্চিত্র—যেগুলো অস্তিত্বই পেল না—সেই শূন্যতাই সবচেয়ে কষ্ট দেয়।” নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারের এই দ্বৈত বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করে দিলো, সৃজনশীলতাকে থামানো যায় না।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy