কল্যাণ-মহুয়া সংঘাত চরমে, ২১ জুলাইয়ের বৈঠকে মমতা, পদত্যাগ কল্যাণের

সোমবার তৃণমূলের নতুন পার্টি অফিসের সামনে এক অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হলেন সাংবাদিকরা। রাজেন্দ্র প্রসাদ রোডে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগে সাংসদদের আগমন চলছিল। সেই সময়, দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎই গেট খুলে একটি গাড়ি ঢুকে আসে, এবং নামেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মুহূর্তেই ছবিটা বদলে যায়। মহুয়ার দিকে পিছন ফিরে কল্যাণ বলে ওঠেন, “কার মুখ দেখলাম, আজ দিনটাই গেল…”

শুধু গেটের সামনেই নয়, ভার্চুয়াল বৈঠকের ভেতরেও উঠে আসে এই সংঘাত প্রসঙ্গ। নাম উল্লেখ না করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন যে, দুই সাংসদের এই ধরনের সংঘাত বরদাস্ত করা হবে না। মাস কয়েক আগেও নির্বাচন কমিশনের অফিসে কল্যাণ ও মহুয়ার সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছিল, যেখানে কল্যাণ রাখঢাক না করে মহুয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। এবার বাদল অধিবেশনের মধ্যেই আবারও নতুন অভিযোগ সামনে এসেছে।

অপারেশন সিঁদুর বিতর্ক:

সম্প্রতি সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা হয়। তৃণমূলের তরফে বক্তব্য রাখার দায়িত্বে ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সায়নী ঘোষ। সূত্রের খবর, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে লোকসভায় কথা বলতে চেয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। কিন্তু কে বলবেন তা ঠিক করার দায়িত্বে ছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং তিনি মহুয়াকে বলতে দেননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

কল্যাণের পদত্যাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ:

এদিন দলের সমন্বয় সাধনের কাজ থেকেও কল্যাণকে সরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে চিফ হুইপ পদে ইস্তফাও দেন কল্যাণ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “বলেছিলাম দিনটা খারাপ যাবে, খারাপই গেল।” কেন খারাপ গেল? সে ব্যাখ্যা না দিলেও এদিন কল্যাণ আবারও মহুয়ার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, “দলকে জানিয়েছি। যা করার করবে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। আমি আমার ডিগনিটি নষ্ট করতে পারব না। আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে যদি বাকি সাংসদরা খুশি হয়, তাহলে হবে। আমি সবাইকে জানিয়েছি, দলনেত্রীকেও জানিয়েছি। কোনো ফল হচ্ছে না।”

“আপনি কি হতাশ?” – এই প্রশ্নের উত্তরে কল্যাণ বলেন, “হতাশার কী আছে। ইংরেজি বলা সুন্দরী মহিলার যদি দলে দাম থাকে, তাহলে থাকবে। একজন এমপি-কে গালাগাল দিচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে কী কালচার। ভালো ভালো শাড়ি পরলেই তো আর বড় কেউ হওয়া যায় না।”

অভিষেকের হস্তক্ষেপ:

এই ঘটনার মধ্যেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কল্যাণকে ফোন করেন বলে সূত্রের খবর। অভিষেক কল্যাণকে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন এবং আপাতত তিনদিন কাজ করতেও বলেছেন। জানা যাচ্ছে, কল্যাণ দাবি করেছেন যে, সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বক্তা হিসেবে লোকসভায় কে বলবে, তা মুখ্যমন্ত্রী যে জানতেন না বলছেন, তা ঠিক নয়। মহুয়া নয়, সায়নী যে বলবেন, তা নিয়ে মমতার সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন কল্যাণ।

এই ঘটনা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আবারও প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে, যা বাদল অধিবেশনের শুরুতেই দলের জন্য অস্বস্তি বাড়িয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy