তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব এবার চরমে পৌঁছালো। সোমবার লোকসভায় দলের মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই মঙ্গলবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ইস্তফা গ্রহণ করে নেন। লোকসভায় নতুন চিফ হুইফের দায়িত্ব পেলেন বারাসাতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এই ঘটনার পর তৃণমূলের অন্দরে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
সূত্রের খবর, লোকসভায় দলের সাংসদদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এরপরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দেন। ইস্তফা দেওয়ার পর তিনি বলেন, “মমতাদি অভিযোগ করেছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিকমতো হচ্ছে না, ফলে আঙুল তো আমার দিকে তোলা হচ্ছে। তাই আমি ছেড়ে দিলাম।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, যারা তাকে গালাগালি দেয়, দল তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং তাকেই দায়ী করছে। এরপর অভিমানী সুরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার দরকার ফুরিয়ে গিয়েছে। এ বার দিদিই দল চালান।” এমনকি প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও তিনি বলেন।
তবে, ইস্তফা দেওয়ার পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার অবস্থান নরম করার চেষ্টা করেন। রাতে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে একটি পুরনো ভিডিও পোস্ট করে মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়িয়ে ২০১৯ সালে লোকসভায় কীভাবে লড়াই করেছিলেন, তার ব্যাখ্যা দেন। যদিও সেই চেষ্টা কাজে আসেনি। মঙ্গলবারই তার ইস্তফা গৃহীত হয় এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নতুন দায়িত্বের ঘোষণা করা হয়।
এই ঘটনার পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থনও নজরে এসেছে। শুভেন্দু অধিকারী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ এবং ‘শিক্ষিত মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করে তার প্রশংসা করেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল দলের ওপর চাপ বাড়াতে পারে। অতীতে মহুয়া মৈত্র কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন, যা সেই সময় যথেষ্ট শোরগোল ফেলেছিল। এখন দেখার বিষয়, দল থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়া কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেন। তিনি কি সত্যিই রাজনীতি ছেড়ে দেবেন, নাকি অন্য কোনো পথে পা বাড়াবেন, সেদিকেই তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল।