কলকাতার পুজোয় নতুন চমক! মহালয়ার আগে টিকিট কেটে ঠাকুর দেখার ব্যবস্থা, শুরু বিতর্ক

বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গাপূজা এখন ইউনেস্কোর ‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতি প্রাপ্ত। বিসর্জন পরিণত হয়েছে ‘কার্নিভালে’। সাবেকি প্রতিমার অঙ্গে থিমের ছোঁয়া, বারোয়ারি পুজোয় কর্পোরেট ছাপ – কালের নিয়মে বদলেছে অনেক কিছুই। তবুও কিছু বিষয় অপরিবর্তিত: রাত জেগে, লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে ঠাকুর দেখার ক্লান্তিহীন আমেজে আমবাঙালি এখনও মেতে ওঠে। পুজোর আগে ভিআইপি পাস জোগাড়ের হুড়োহুড়ি পড়ে বটে, কিন্তু টিকিট কেটে পুজো দেখার কথা বোধ হয় সাধারণ মানুষ কস্মিনকালেও ভাবেনি। এবার সেই ধারণাতেই আঘাত হানতে চলেছে এক নতুন চমক: কিছু প্যান্ডেল দেখতে ১০০-১৫০ টাকা খরচ করতে হতে পারে!

মহালয়ার আগে টিকিট কাটার ব্যবস্থা:

বর্তমানে মহালয়ার আগেই অনেক মণ্ডপের উদ্বোধন হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ফাঁকা সময়ে ঠাকুর দেখার জন্য অনেকেই এই দিনগুলোতে বেরিয়ে পড়েন। এবার সেই সময়ে ঠাকুর দেখতে গেলে দর্শকদের টিকিট কাটতে হবে। কলকাতার তিনটি মণ্ডপে এই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

যে তিনটি মণ্ডপে টিকিট:

বালিগঞ্জ কালচারাল

দমদম পার্ক ভারত চক্র

কেন্দুয়া শান্তি সঙ্ঘ

এই তিনটি পুজো মণ্ডপেই মহালয়ার আগে ঠাকুর দেখতে গেলে টিকিট কাটতে হবে। ঠাকুর দেখার জন্য সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে – সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত। এই তিনটি পুজোরই শিল্পী সুশান্ত শিবানী পাল।

বিতর্ক ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া:

এই নতুন ব্যবস্থা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, শিল্প প্রদর্শনের জন্য টিকিট কাটতেই পারেন। আবার অনেকে বলছেন, এতে বাঙালির সাবেকিয়ানার আবেগ ধাক্কা খাবে। বহু মানুষই মনে করেন, লাইনে দাঁড়িয়ে, ভিড় টপকে ঠাকুর দেখাতেই আসল আনন্দ।

বালিগঞ্জ কালচারালের উদ্যোক্তা অঞ্জন উকিল এই ব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “বিদেশ থেকে অনেকে এখন বাংলার দুর্গাপূজা দেখতে আসছেন। অনেক বয়স্ক মানুষও আসেন। তাঁদের পক্ষে ভিড় ঠেলে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ভিড়ের মধ্যে শিল্পটা উপভোগ করার সুযোগ হয় না। ছবি তোলার সুযোগও পান না মানুষ। এই ব্যবস্থায় সেই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।” তিনি মনে করিয়ে দেন, বিদেশেও কোনো ফেস্টিভ্যালে প্রবেশ করতে গেলে টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে বাংলার দুর্গাপূজা নয় কেন!

শিল্পী সুশান্ত শিবানী পালও আশ্বস্ত করে বলছেন যে, বাংলার পুজো সর্বজনীনই থাকছে। মহালয়ার পর সবাই আগের মতোই বিনামূল্যে ঠাকুর দেখতে পারবেন। এই টিকিট ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো দেবীপক্ষের আগে শিল্পটাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। শিল্পী বলেন, “হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার পর অনেক মানুষ বাংলার এই পুজো দেখতে চাইছে। দেশের অনেক শিল্পমনস্ক মানুষও দেখতে চাইছেন। তাই এমন ব্যবস্থা।”

টিকিটের মূল্য ও সময়সীমা:

আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া। তার আগে অর্থাৎ ১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর টিকিট কেটে এই তিনটি পুজো মণ্ডপে প্রবেশ করতে হবে। টিকিট অনলাইনে কাটা যাবে। টিকিটের মূল্য: ১ জনের জন্য ১০০ টাকা, ২ জনের জন্য ১৫০ টাকা, ৩ জনের জন্য ২০০ টাকা এবং ৪ জনের জন্য ৩০০ টাকা।

বিরোধিতা:

তবে এই ব্যবস্থার বিরোধী মতও রয়েছে। শহরের আর এক পুজোর উদ্যোক্তা সজল ঘোষ বলেন, “পুজোর বারোয়ারি এতে এসেন্স নষ্ট হয়ে যাবে।” তিনি আরও মনে করেন, এই ব্যবস্থা একটি বিভেদ তৈরি করবে।

সব মিলিয়ে, কলকাতার দুর্গাপূজায় টিকিট কেটে ঠাকুর দেখার এই নতুন উদ্যোগ কতটা সফল হয় এবং দর্শকদের মধ্যে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পায়, তা সময়ই বলবে। তবে এই বিতর্ক পুজোর আগে শহরে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy