নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংঘাত চরমে পৌঁছল। ভোটের কাজে অনিয়মের অভিযোগে চারজন আধিকারিককে বরখাস্ত করার কমিশনের নির্দেশ না মানায় এবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিল্লিতে তলব করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যসচিবকে দিল্লির নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক নোটিস পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন নির্বাচন কমিশন রাজ্যের চারজন আধিকারিক এবং একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের এবং তাদের বরখাস্ত করার সুপারিশ করে। এই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা নিজেদের ঘনিষ্ঠ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের দিয়ে গোপনে ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় যুক্ত করার কাজ করতেন। নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ পাওয়ার পর পরই রাজ্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
তবে, নবান্ন কমিশনের এই নির্দেশ পুরোপুরি মানতে রাজি হয়নি। সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানান যে, অভিযুক্ত পাঁচজনের বিরুদ্ধে এখনই কোনো কঠোর পদক্ষেপ বা বরখাস্ত করা হচ্ছে না। বরং, রাজ্য সরকার তাদের বিরুদ্ধে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। পন্থ আরও জানান যে, আপাতত ওই পাঁচজনের মধ্যে থেকে দু’জনকে নির্বাচন সংক্রান্ত সব দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা:
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, কোনো আধিকারিককে অযথা শাস্তি পেতে দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর রাজ্য সরকারের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়।
কমিশনের কড়া পদক্ষেপ:
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে তলব করল। কমিশনের নোটিসে বলা হয়েছে, বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে মনোজ পন্থকে দিল্লিতে কমিশনের সামনে হাজির হতে হবে। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে রাজ্যকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাজ্য তা মানেনি। এই কারণেই কমিশন এই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন সবার নজর নবান্নের দিকে। মুখ্যসচিব কি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে দিল্লিতে হাজির হবেন, নাকি এই সংঘাত আরও নতুন মোড় নেবে, সেটাই দেখার বিষয়।