লোকসভা নির্বাচনে ভোটচুরির অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংঘাত চরমে পৌঁছেছে। রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে ভোটচুরির অভিযোগ তুলেছেন, তার প্রমাণ হলফনামায় স্বাক্ষর করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এই নির্দেশের পরেই সরব হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, যিনি কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন যে, বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের মহাদেবপুরা বিধানসভায় ১ লক্ষেরও বেশি ভোট চুরি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই কারচুপির কারণেই বিজেপি ২৫টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন। এরপরেই কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকরা রাহুল গান্ধীকে চিঠি দিয়ে তার দাবির সপক্ষে প্রমাণ হলফনামায় স্বাক্ষর করে জমা দিতে বলেন।
শুক্রবার সংসদ চত্বরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এই প্রসঙ্গে বলেন, “ওরা যে আইনের আওতায় হলফনামা চাইছে, তাতে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে। জবাব না দিলেও কিছু হবে না। তাহলে হলফনামা চাইছে কেন?” তিনি আরও বলেন, “সংসদে আমরা শপথ নিয়েছি, এর থেকে বড় শপথ আর কী হতে পারে? আমরা যা বলছি, সব জনসমক্ষে বলছি এবং প্রমাণও দেখাচ্ছি। কমিশন কেন ইভিএমের ইলেকট্রনিক্স ভোটার তালিকা দিচ্ছে না? তদন্তই বা কেন করছে না?”
কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাহুল গান্ধীকে নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী হলফনামা দিতে বলা হয়েছে। তিনি যদি তার দাবির সপক্ষে প্রয়োজনীয় নথি জমা দেন, তাহলে কমিশন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করবে। কিন্তু যদি তিনি তা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার অভিযোগ ভিত্তিহীন হিসেবে গণ্য হবে।
এদিকে, এই ইস্যুতে বিজেপির পক্ষ থেকেও রাহুলকে পাল্টা আক্রমণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, “ওরা কোনো যুক্তি ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে শিক্ষা দিচ্ছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এর আগেও রাহুলকে চিঠি পাঠিয়ে তার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা করেননি। সরকারি নীতি মেনে তদন্ত শুরু করার জন্য হলফনামা জরুরি, কিন্তু তিনি তাও দিচ্ছেন না।” তিনি বলেন, রাহুল যদি তার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে না পারেন, তবে তার দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা চরমে। কংগ্রেস একদিকে যেমন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, অন্যদিকে কমিশন এবং বিজেপি রাহুল গান্ধীর অভিযোগের সত্যতা প্রমাণের জন্য হলফনামা জমা দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, রাহুল গান্ধী কমিশনের নির্দেশে সাড়া দিয়ে তার অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দেন কিনা।