“ওষুধের উৎপাদন মূল্যের চেয়ে ১১০০ শতাংশ বেশি দাম!”-মোদী সরকারকে কড়া বার্তা কমিটির

অসুস্থ মানুষের অসহায়তাকে পুঁজি করে ওষুধের বাজারে চলছে লাগামহীন মুনাফা লোটার খেলা। উৎপাদন মূল্যের তুলনায় খুচরো বাজারে ওষুধের দাম বাড়ছে ৬০০ থেকে ১১০০ শতাংশ পর্যন্ত! ওষুধের এই অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম গাফিলতি ও ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’ নিয়ে এবার তীব্র উষ্মা প্রকাশ করল রসায়ন ও সার বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

কোথায় গলদ? কী এই টিএমআর (TMR)? সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যত ব্যর্থ কেন্দ্র। কমিটির সুপারিশ, ২০১৩ সালের ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার (DPCO) সংশোধন করে অবিলম্বে ‘ট্রেড মার্জিন র‍্যাশনালাইজেশন’ (TMR) ফ্রেমওয়ার্ক চালু করতে হবে।

সহজ কথায়, ওষুধ তৈরির পর থেকে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে (ডিস্ট্রিবিউটর, হোলসেলার ও রিটেলার) লভ্যাংশের একটি নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে হবে। কমিটির মতে, শুধুমাত্র এমআরপি (MRP) নিয়ন্ত্রণ করে লাভ নেই, বরং প্রতিটি স্তরের মুনাফায় রাশ টানলেই ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

করোনা কালের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান ক্ষোভ: রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯-২০ সালে করোনাকালে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ওষুধের ওপর এই টিএমআর নীতি প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছিল, এতে ওষুধের দাম অনেকটা কমে। কিন্তু সেই সফল মডেলকে কেন স্থায়ী আইনি কাঠামোয় আনা হলো না, তা নিয়ে সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ কমিটি। এই বিলম্বের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্যানসার বা সুগারের মতো ক্রনিক রোগের রোগীরা, যাঁদের নিয়মিত ওষুধ কিনতে হয়।

কমিটির একগুচ্ছ কড়া সুপারিশ:

ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রণ: প্রথম পর্যায়ে অত্যাবশ্যকীয় ও প্রাণদায়ী ওষুধগুলিকে এই নিয়মের আওতায় আনতে হবে। পরবর্তী ধাপে সব ধরণের ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

নজরদারি বৃদ্ধি: এনপিপিএ (NPPA)-কে বাজার পর্যবেক্ষণ আরও শক্তিশালী করতে হবে।

কড়া শাস্তি: নিয়ম ভাঙলে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

কমিটি সাফ জানিয়েছে, সাধারণ মানুষের স্বার্থকে সরিয়ে রেখে কোনোভাবেই ওষুধ শিল্পের মুনাফাকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না। এখন দেখার, এই রিপোর্টের পর কেন্দ্র ওষুধের দাম কমাতে কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy