পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার সাতজন শ্রমিকের কোনো খোঁজ নেই। চার বছর বা তার বেশি সময় ধরে উড়িষ্যায় শ্রমিকের কাজ করা এই নিরীহ মানুষগুলোকে ‘বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে’ বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করেছে উড়িষ্যা পুলিশ। এই ঘটনা আবারও বাংলাভাষী মানুষের ওপর অযৌক্তিক সন্দেহের পুনরাবৃত্তি ঘটালো, যা গোটা ভগবানগোলা জুড়ে তীব্র উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
জীবিকার সন্ধানে ভিন রাজ্যে, নিয়তির পরিহাস
ধৃত সাতজন শ্রমিকের নাম — আবু হাসনাত, আমির হোসেন, রাজ্জাক হোসেন, আয়নাল হক, লতিবুল হক, মহম্মদ নুরনবী ও হোসেন সেখ। এরা সকলেই ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত ৭ নম্বর হাবাসপুর অঞ্চলের ডিয়ার জালিবাগিচা গ্রামের বাসিন্দা। কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ হোটেলের কর্মী, আবার কেউ ফেরির ব্যবসা করে নিজেদের এবং পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। উড়িষ্যার মাটিই ছিল তাঁদের একমাত্র ভরসা।
চার দিন আগে আচমকাই উড়িষ্যার পুলিশ তাঁদের বাসস্থান থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা প্রমাণ ছাড়াই শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর থেকেই এই সাতজন পুরোপুরি নিখোঁজ। তাদের ফোন বন্ধ, উড়িষ্যা পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সরকারি তথ্যও মেলেনি। তাদের পরিবারগুলি এখন অন্ধকারে।
গ্রামজুড়ে আতঙ্ক ও পরিজনদের অশ্রু
ঘটনার সময় কোনোভাবে পালিয়ে আসা জালিবাগিচার আরও কয়েকজন যুবক মারফত খবর পৌঁছায় গ্রামে। আর এই খবর মুহূর্তেই গোটা গ্রামকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পরিজনদের চোখের জল কিছুতেই থামছে না। বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানেরা প্রিয়জনদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়ে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামে এখন একটাই দাবি – দ্রুত তাঁদের ছেলেদের নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। পরিবারগুলো ইতিমধ্যেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে।
রাজনৈতিক অভিযোগ ও মানবিক আবেদন
জালিবাগিচা গ্রামের প্রধান কাওশেখ আহম্মেদ এই ঘটনাকে ‘সুপরিকল্পিত অত্যাচার’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এনআরসি নিয়ে বাংলার মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করতেই উড়িষ্যার বিজেপি সরকার এই পথ নিচ্ছে। এটা অন্যায়, নিছক পরিচয়ের নামে নিরীহ শ্রমিকদের হেনস্থা করা হচ্ছে।” তাঁর এই মন্তব্য ঘটনাটিকে রাজনৈতিক বিতর্কের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
তবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এখন মানবিকতার দাবিই সবচেয়ে বড়। ৭টি পরিবারের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তাদের একমাত্র অপরাধ, তারা ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলছিলেন। উড়িষ্যা পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো বিবৃতি না আসায়, এই সাতজন শ্রমিকের বর্তমান অবস্থা এবং তাদের মুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। অবিলম্বে তাদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ এবং দ্রুত বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছে মুর্শিদাবাদের এই জালিবাগিচা গ্রাম।