চলতি টেস্ট সিরিজে ভারতীয় পেসারদের মধ্যে অন্যতম সেরা পারফর্ম করা মহম্মদ সিরাজ ওভাল টেস্টের চতুর্থ দিনে এক অবিশ্বাস্য ভুলের কারণে নায়ক থেকে খলনায়ক বনে গেলেন। তার একটি ক্যাচ ফেলার মাসুল হিসেবে ইংলিশ ব্যাটার হ্যারি ব্রুক জীবন পেয়ে শতরান হাঁকিয়েছেন, যা ভারতের ওভাল টেস্ট জয়ের সম্ভাবনাকে কার্যত ফিকে করে দিয়েছে।
প্রথম ইনিংসে চার উইকেট নিয়ে এবং চতুর্থ দিনের সকালে অলি পোপকে দুর্ধর্ষ ডেলিভারিতে ফিরিয়ে সিরাজ যখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, ঠিক তখনই তার হাতে ঘটে যায় এক মারাত্মক ভুল। মর্নিং সেশনে ইংল্যান্ড যখন ৩ উইকেটে ১৫৩ রানে দাঁড়িয়ে এবং জয়ের জন্য ২০০-র বেশি রান প্রয়োজন, তখন ক্রিজে ছিলেন জো রুট ও হ্যারি ব্রুক। ঠিক আগের ওভারেই আকাশদীপকে একটি ছক্কা এবং একটি চার মেরে ব্রুক বাজবল মেজাজে ঢুকে পড়েছিলেন।
৩৫তম ওভারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার লাফিয়ে ওঠা প্রথম ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে উদ্যত ব্রুক ফাইন-লেগে ধরা পড়েন সিরাজের হাতে। ক্যাচটি তালুবন্দী করার পর কৃষ্ণা দু-বাহু প্রসারিত করে উচ্ছ্বাসও দেখিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হয় যখন ব্রুকের দিকে তাকিয়ে হতাশায় মুখ ঢাকেন কৃষ্ণা। সিরাজ ক্যাচটি ধরে ফেললেও বাউন্ডারি সীমানায় তার পা পড়ে যায়। অর্থাৎ, আউটের পরিবর্তে ১৯ রানে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রুকের খাতায় যোগ হয় ছয় রান এবং তিনি জীবন ফিরে পান।
জীবন ফিরে পেয়ে আগ্রাসী ব্যাটিং জারি রাখেন ব্রুক। লাঞ্চের পরপরই মাত্র ৩৯ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এরপর ভারতীয় বোলারদের শাসন করে দ্বিতীয় সেশনে টেস্ট ক্রিকেটে তার দশম এবং এই সিরিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পূর্ণ করে ফেলেন। মাত্র ৯১ বলে ওভালে এই বিস্ফোরক শতরানটি আসে ব্রুকের ব্যাট থেকে, যা ভারতকে সিরিজ হারের দোরগোড়ায় নিয়ে গেল।
প্রথম সেশনে জোড়া উইকেট হারালেও রুট এবং ব্রুকের ব্যাটিং বিক্রমে তৃতীয় সেশনে এখনও উইকেটহীন ইংল্যান্ড। ইতিমধ্যেই অর্ধশতরান পূর্ণ করে শতরানের দিকে এগোচ্ছেন রুটও। ১০৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর অবিচ্ছেদ্য চতুর্থ উইকেটে এই দুই ব্যাটার ইতিমধ্যেই ১৮০ রান যোগ করে ফেলেছেন। এই প্রতিবেদন লেখার মুহূর্তে রুট ব্যাট করছেন ৭৮ রানে। ৬১ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ২৮৬, অর্থাৎ জয়ের জন্য তাদের আর মাত্র ৮৮ রান প্রয়োজন।
হ্যারি ব্রুক আউট হলে ভারতের কতটা সুবিধা হত তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন, তবে সিরাজের এই ‘ব্লান্ডার’ যে সিরিজে সমতা ফেরানোর ভারতীয় সম্ভাবনায় কার্যত জল ঢেলে দিল, তা বলাই বাহুল্য। এখন শেষ দিনে ভারতীয় বোলাররা কী চমক দেখাতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়।