হিমাচল প্রদেশে অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জে.বি. পারদিওয়ালা এবং আর. মহাদেবনের বেঞ্চ স্পষ্টভাবে সতর্ক করে বলেছে যে, যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে এক দিন হিমাচল প্রদেশ ভারতের মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। আদালত এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (suo motu) মামলা আমলে নিয়েছে এবং আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৫শে আগস্ট নির্ধারিত হয়েছে।
এই নির্দেশটি প্রিস্টাইন হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থার করা আবেদন খারিজ করার সময় এসেছে। সংস্থাটি তাদের প্রস্তাবিত হোটেল প্রকল্পের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে ‘সবুজ এলাকা’ ঘোষণার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখে।
আদালত বলেছে, “হিমাচলের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্রকৃতি মানুষের কার্যকলাপের উপর ক্ষুব্ধ। পাহাড় ধস, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ধসে পড়া, সবই এর ফল। এই বছরও বন্যা ও ভূমিধসের কারণে হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।”
বিচারপতিরা আরও মন্তব্য করেন যে, হিমাচলে ভূমিধস, বন্যা এবং ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগগুলি মূলত মানবসৃষ্ট। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াই চার লেনের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে এবং পাহাড়গুলিকে বারুদ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আদালত জোর দিয়ে বলেছে, কেবল রাজস্ব আদায়ই সব কিছু নয়। পরিবেশ ধ্বংসের বিনিময়ে এই ধরনের উপার্জন হিমাচলের অস্তিত্বকে সংকটের মুখে ফেলে দেবে।
হিমাচলের পাশাপাশি উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। সম্প্রতি উত্তরকাশী জেলার ধরলি গ্রামে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত আর্য জানিয়েছেন, এই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু ঘরবাড়ি ও হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পান্ডব মন্দিরের মতো ঐতিহ্যবাহী স্থানও প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে।
এই সমস্ত ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে, উন্নয়নের নামে প্রকৃতির ওপর যে অবিচার করা হচ্ছে, তার ফলস্বরূপ হিমালয়ের কোলে অবস্থিত রাজ্যগুলি এক ভয়াবহ সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপ পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্বকে আরও একবার সামনে এনেছে।